বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিয়ে এবার বেশ আগে থেকেই উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা শুরু হয়েছে। অরক্ষিত মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ডাকাতি, ছিনতাই, দুর্ঘটনা ও যানজট রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে। সাধারণত সড়ক পথেই বেশির ভাগ মানুষ শহর ছেড়ে ঈদের ছুটিতে গ্রামে ফিরে যায়। এবার ধারণা করা হচ্ছে, রাজধানী ও পাশর্^বর্তী এলাকা থেকে প্রায় দেড় কোটি মানুষ ঢাকা ছাড়বেন। প্রতিবছর যানজট ও দুর্ঘটনার পাশাপাশি এবার মহাসড়কে ডাকাতির আশঙ্কা বেড়ে গেছে। নাজুক আইনশৃঙ্খলার কারণে কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই এবারের ঈদযাত্রা শুরু হবে। পুলিশ জানিয়েছে, সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতিতে জড়িত ১৪৪৩ জন ডাকাতকে ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে। এবারের ঈদের ছুটি হবে দীর্ঘ। এই দীর্ঘ ছুটিকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো গেলে যাত্রীদের ভোগান্তিমুক্ত, স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
উল্লেখ্য, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামের পথ ধরে। ফলে যাতায়াতে তীব্র গণপরিবহনের সংকট দেখা দেয়। পাশাপাশি মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজট লাগে। এ সময় দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে যায়। এই বাস্তবতা প্রতিবছরই মোকাবিলা করতে হয়। তবে আশার কথা, এবারের ঈদের ছুটি অন্য বারের চেয়ে বেশি হবে। ফলে, সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিলে এবারের ঈদযাত্রা অনেকটা ভোগান্তিমুক্ত করা যায়। ঈদের সময় সড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ বাড়ে। এ সময় ফিটনেসবিহীন সিটিবাসে পোশাক শ্রমিকদের যাত্রা শুরু হয়। কারণ, পোশাক শ্রমিকরা সংখ্যায় প্রচুর, সামর্থ্যে সীমিত। লাখ লাখ পোশাক শ্রমিক শেষ মুহূর্তে বেতন বোনাস পেয়ে ফিটনেসবিহীন সিটি বাস ভাড়া করে কিংবা খোলা ট্রাকে করে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যায়। এসব যানবাহন রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়ে। এ প্রবণতা বন্ধে কলকারখানা ও পোশাক শ্রমিকদের বেতন বোনাস ২৪ মার্চের মধ্যে পরিশোধ করে ধাপে ধাপে বাড়ি পাঠানো নিশ্চিত করা দরকার।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, এবারের ঈদে ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে প্রায় দেড় কোটি মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যে যাবেন। দেশের এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি মানুষের যাতায়াত হবে, যার ৭৫ শতাংশ সড়কপথে, ১৭ শতাংশ নৌপথে এবং ৮ শতাংশ রেলপথে যাতায়াত হবে। পথে পথে যাত্রী হয়রানি, সড়কে ডাকাতি, ছিনতাই ও দুর্ঘটনা রোধে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনের পর্যবেক্ষণ মতে, বিগত ঈদুল ফিতরে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত এবং ১৩৯৮ জন আহত হয়। বিগত ৯ বছরে শুধু ঈদুল ফিতরে ২৩৭৭টি দুর্ঘটনায় ২৭১৪ জন নিহত এবং ৭৪২০ জন আহত হয়েছে। এবারের ঈদে দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মালিক সমিতি, শ্রমিক ফেডারেশন, পুলিশ ও বিআরটিএর হস্তক্ষেপ কামনা করে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম বলেন, বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় যাত্রী দুর্ভোগ ও সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। এর দায় অন্যায়ভাবে মালিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এবারের ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে মালিক সমিতি কঠোর হবে।
হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি অপারেশন মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সড়কে ডাকাতিতে জড়িত ১৪৪৩ জন ডাকাতকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। ৩৯০০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে ৩৪০টি অপারেশন টিম কাজ করছে। ঈদে যাত্রাপথে হাইওয়ে পুলিশের হটলাইন নম্বর সঙ্গে রাখুন। আমাদের কল করার ১৫ মিনিটের মধ্যে সাড়া মিলবে।
স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রার জন্য যাত্রী, চালক, পরিবহনকর্মী সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। ঈদযাত্রায় ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন চলাচল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মোটসাইকেল যাত্রী ও আরোহীর হেলমেট ব্যবহার, গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যানজট ও দুর্ঘটনা কমাতে জাতীয় মহাসড়ক থেকে প্যাডেল রিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন-করিমন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঈদের ১০ দিন আগে বন্ধ রাখতে হবে। মহাসড়কের টোলপ্লাজায় অতিরিক্ত জনবল নিয়ে যানজট নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা ও মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশকে স্পটে দাঁড়িয়ে গাড়ির কাগজপত্র দেখার পরিবর্তে ঈদের ১০ দিন আগে থেকে প্যাট্রোলিং ডিউটির নির্দেশনা দিতে হবে। সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই বন্ধে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীদের সড়কে সক্রিয় রাখতে হবে।