রাজশাহীর তানোরে বিএনপির দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত এক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নেকশার আলী (৩৫) নামের এই ব্যক্তি মারা যান। এর আগে, গানিউল নামের একজন নিহত হয়েছিলেন।
মৃত নেকশার আলী তানোরের রাতৈল গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তানোরের চান্দুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিনের অনুসারী ছিলেন নেকশার।
গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় মফিজ উদ্দিনের অনুসারিদের সঙ্গে ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সভাপতি আজাদ আলীর অনুসারিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মফিজের পক্ষের ছয়জন ও আজাদের পক্ষের নয়জন আহত হয়েছিলেন।
সেদিন মফিজের অনুসারিরা রাতৈল বাজারে মুদি দোকানী দুরুল হুদার দোকানে হামলা চালান। লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয় দোকানে। দুরুল হুদা ও তার ছেলে মিনু আহত হয়েছিলেন। এছাড়া আজাদের অনুসারি ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য মো. রনিও আহত হয়েছিলেন।
২৮ মার্চ রনি বলেছিলেন, আগের দিন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মফিজ উদ্দিন তার বাড়িতে ইফতারের আয়োজন করেন। এতে অংশ নেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন। এই ইফতার অনুষ্ঠানের জন্য মুদি দোকানী দুরুলের কাছে চাঁদা চেয়েছিলেন মফিজ। চাঁদা না দেওয়ার কারণে ইফতারের পর তার দোকানে হামলা হয়। এ সময় তারা বাধা দিতে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে।
অভিযোগ অস্বীকার করে সেদিন সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন বলেছিলেন, ‘এ রকম কোনও ঘটনা না। বিএমডিএর ডিপ নিয়ে গণ্ডগোল। আমার বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরের ঘটনা। আমি ওই এলাকায় দুই বছর ধরে যাইনি। আমার কোনো লোকও মারামারিতে যায়নি।’
তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, ‘মারামারির ঘটনার পর দুপক্ষই থানায় দুটি মামলা করেছিল। একপক্ষের একজন আজ (মঙ্গলবার) বিকালে মারা গেছে। আগে করা মারামারির মামলাটিই হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে। আসামিদেরও গ্রেফতার করা হবে।'
এর আগে, গত ১১ মার্চ তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই ইফতারে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন। আর প্রধান বক্তা ছিলেন সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান। সেদিন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোমিনুল হকের অনুসারীরা প্রধান অতিথিকে বরণ করতে চাইলে বাধা দেন বর্তমান সভাপতি মুজিবুর রহমানের অনুসারীরা। তখন দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে মোমিনুল হকের ছোট ভাই গানিউল ইসলাম আহত হন। পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ ঘটনায় বিএনপির ৩৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। এ ঘটনায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান এবং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মুজিবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই ঘটনার পর জেলা বিএনপি তানোরে ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজন না করার নির্দেশনা দেন। এরপরও ইফতার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে তানোরে আরও এক ব্যক্তির প্রাণহানির ঘটনা ঘটলো।
স্থানীয় বিএনপি নেতা সুলতানুল ইসলাম তারেক বলেন, 'জেলা বিএনপি নির্দেশনা অমান্য করে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করায় আরও এক কর্মীর প্রাণ গেল। '
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ