বিশ্বের বর্তমান প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে মানুষের বিনোদনের ধরনও বদলে যাচ্ছে। একসময় যেখানে খেলার মানে ছিল মাঠে গিয়ে বল ছোঁয়া বা ক্রিকেট ব্যাট ধরার অভ্যাস, সেখানে এখন ভিডিও গেমসের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। স্মার্টফোন ও কম্পিউটারে গেম খেলা এখন সাধারণ হয়ে উঠেছে, এবং এই গেমিং ট্রেন্ড কেবল তরুণদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই—সব বয়সের মানুষ এতে যুক্ত হচ্ছেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিশ্বের ৮৩.৬ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বর্তমানে কোনো না কোনোভাবে ভিডিও গেম খেলার সাথে যুক্ত। এর মানে হল যে আজকের দিনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় সবাই কিছু না কিছু গেমিং কার্যক্রমে অংশ নেন।
বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে গ্লোবাল গেমারদের সংখ্যা প্রায় ৩৩২ কোটি হতে পারে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, স্মার্টফোনের বিস্তার, সাশ্রয়ী ডেটা এবং মোবাইল গেম অ্যাপগুলোর জনপ্রিয়তা এই বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
বিশ্বের গেমারদের মধ্যে এশিয়া সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে স্থান করে নিয়েছে, যেখানে গেমারদের সংখ্যা প্রায় ১৪৮ কোটি। যা বৈশ্বিক গেমিং জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ। চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে মোবাইল গেমিং অত্যন্ত জনপ্রিয়।
ইউরোপে গেমারদের সংখ্যা প্রায় ৪৫ কোটি, এবং লাতিন আমেরিকায় গেমিং এবং ই-স্পোর্টস দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আজকের গেমিং জগৎ কেবল ভিডিও গেম খেলা নয়, এটি একটি বহুমুখী ইকোসিস্টেমে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্ট: যা কোটি কোটি ডলার পুরস্কারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আয়োজিত হয়।
লাইভ স্ট্রিমিং: Twitch ও YouTube Gaming-এর মতো প্ল্যাটফর্মে গেমাররা নিয়মিত গেম খেলে ও তা লাইভ দেখিয়ে আয় করছেন।
গেম ডেভেলপমেন্ট: লক্ষ লক্ষ ডেভেলপার এখন নতুন গেম তৈরি করছেন, যা বিশাল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও ক্লাউড গেমিং: যা ভবিষ্যতের গেমিং অভিজ্ঞতাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।
গবেষণা বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে গেমিং ইন্ডাস্ট্রির বাজার মূল্য ৩৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, আগে গেমিং ছিল কনসোল এবং কম্পিউটার নির্ভর, কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় অংশ হয়ে উঠেছে মোবাইল গেমিং। Subway Surfers, PUBG Mobile, Free Fire, Candy Crush—এই গেমগুলোর মাধ্যমে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সবাই গেমিংয়ে অংশ নিচ্ছে, এবং এতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির মধ্যে ছাত্র, চাকরিজীবী, গৃহিণী এমনকি অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
তবে এই গেমিং প্রবণতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কিছু উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন। অতিরিক্ত গেম খেলা, আসক্তি, চোখের সমস্যা, মানসিক চাপ ইত্যাদি সম্পর্কে তারা সতর্ক করেছেন। তাই সচেতনভাবে গেম খেলার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল