জাতীয় বা বয়সভিত্তিক ফুটবলে মেয়েরা একের পর এক শিরোপা জিতছেন। পুরুষ ফুটবলাররা যেখানে ব্যর্থতায় বন্দি, সেখানে দেশের হয়ে মেয়েরা আলো ছড়াচ্ছেন। ঘরে-বাইরে শুধু জয়গান গেয়ে চলেছেন মেয়েরা। অথচ আফঈদা-সাগরিকাদের সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কি? ২০২৪ সালে নারী জাতীয় দল সাফ শিরোপা ধরে রাখার পর বাফুফে থেকে কোনো অর্থ পুরস্কার দেওয়া হয়নি। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে পুরস্কার দেওয়া হলেও বাফুফের কি কোনো দায়িত্ব নেই? আগের সাফ শিরোপা, এরপর এশিয়ান কাপ চূড়ান্ত পর্বে সুযোগ পাওয়া ও সাফ অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও বাফুফে থেকে কোনো পুরস্কার মেলেনি।
পুরস্কার দূরের কথা, মেয়েরা ঘরোয়া আসরে খেলার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করবেন সে পথও বন্ধ রেখেছে বাফুফে। ২০২৪ সালে সাবিনা খাতুনরা সাফে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তৎকালীন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ঘোষণা দিয়েছিলেন নারী ফুটবল উন্নয়নে যা যা দরকার করবেন। কথা দিয়েছিলেন নারী লিগ নিয়মিত হবে এবং তা জমজমাটভাবে। হবে করপোরেট লিগ ও জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। এমনকি নারী আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট মাঠে গড়াবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এমন ঘোষণার পর সালাউদ্দিন তো তিন বছর সভাপতির চেয়ারে ছিলেন। কোনো প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেননি। অযথা সহজসরল মেয়েদের মিথ্যার আশ্বাসই দিয়ে গেছেন। বরং যে নারী লিগ নিয়মিত হতো তার বারোটা বাজিয়ে গেছেন। নারী উইং চেয়ারম্যানের চেয়ারে মাহফুজা আক্তার কিরণ দীর্ঘদিন ধরে বসে আছেন। তিনি কি মেয়েদের জন্য এমন কিছু করেছেন যা বলার মতো? কিছুই করেননি। তবে মিথ্যাচারে তাঁর জুড়ি নেই। মিয়ানমারে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কিরণ বলেছিলেন, ‘সালাউদ্দিনের কারণেই নারী ফুটবলে এত উন্নতি।’ অবাক লাগে, একবার ভাবেনও না এমন কথা বললে বিতর্কিত না প্রশসিংত হবেন?
সালাউদ্দিন এখন নেই। সভাপতির চেয়ারে নতুন মুখ। এর পরও নারী ফুটবলাররা বঞ্চনার শিকার কেন? সবচেয়ে অবাক বিষয়, বিতর্কিত কিরণ তাঁর চেয়ার ধরে রেখেছেন। সাফল্য আসছে একের পর এক। বর্তমান সভাপতির নীরবতা সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। সবচেয়ে বড় কথা লিগটাও জখাখিচুড়ি পাকিয়ে ফেলেছে। নারী লিগ কবে হবে নিশ্চয়তা নেই। শোনা যাচ্ছে, নারী লিগের শিডিউল ঘোষণা হবে। তাকে কি লিগ বলা যাবে? ছয়টি দল নাকি খেলবে। বাফুফের নির্বাচনের পর কিরণ জোর গলায় বলেছিলেন, ‘সামনের লিগ হবে আকর্ষণীয়। দেশের সব বড় বড় ক্লাব খেলবে।’ তাই যদি হয় তাহলে ৬ দল কেন? শোনা যাচ্ছে, অল্পসংখ্যক দলের মধ্যে আবার পুল প্রথাও থাকবে। অর্থাৎ ইচ্ছা থাকলেও মেয়েরা তাদের পছন্দের দলে নাম লেখাতে পারবেন না। নিয়ম করা হচ্ছে যেসব মেয়ে লিগ খেলবেন তাদের বাফুফের ক্যাম্পেই থাকতে হবে। এভাবে কি লিগ হয়? মেয়েরা সামান্য যে অর্থ পেতেন তা-ও বন্ধ হয়ে যাবে স্বৈরাচারী নিয়মে। বাফুফে সভাপতি কি এসব জানেন না?