নিঃসন্দেহে মুশফিকুর রহিমের প্রিয় ভেন্যুগুলোর একটি গল। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে দুর্গঘেরা স্টেডিয়ামটির নাম। এখানেই বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন মুশফিক। অবশ্য ডাবল সেঞ্চুরির হাতছানি ছিল টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান মোহাম্মদ আশরাফুলেরও। ড্র টেস্টটিতে নাসির হোসেনও সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছিলেন। সে মাঠে আট বছর পর ফের নামছেন টাইগাররা। ১৭-২১ জুন গল টেস্ট দিয়ে নাজমুল হাসান শান্তদের শ্রীলঙ্কা সফর শুরু হচ্ছে। শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৫-২৭ সালের চতুর্থ চক্র। গলের পর কলম্বোয় ২৫-২৯ জুন দ্বিতীয় টেস্ট খেলবে দুই দেশ। গলে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে আশরাফুলের। ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথ থেকে গতকাল গলের উইকেটের আচরণ, একাদশ কেমন হবে সে নিয়ে কথা বলেন। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, পেসারদের তুলনায় স্পিনারদের সাফল্যের হার বেশি। স্পিনাররাই বেশি সহায়তা পাচ্ছেন উইকেটে। তাহলে নাজমুল বাহিনী কি স্পিন আধিক্য নিয়ে একাদশ সাজাবে? সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল টেকনিক্যালি উত্তর দেন, ‘উইকেট না দেখে বলা কঠিন একাদশ কেমন হওয়া উচিত। তবে শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা স্পিনের বিপক্ষে বরাবরই সাবলীল। সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে। আমাদের পেস বোলিং বিভাগ যথেষ্ট শক্তিশালী।’
স্পিন বিভাগে টাইগারদের মূল ভরসা তাইজুল ইসলাম
সমুদ্রের পাড় লাগোয়া গল ক্রিকেট স্টেডিয়াম। পাথুরে দুর্গঘেরা স্টেডিয়ামটির সৌন্দর্য একেবারেই অন্য রকম। শ্রীলঙ্কার যে কোনো স্টেডিয়ামের চেয়ে সুন্দর। ২০০৪ সালের সুনামির পর প্রায় বিধ্বস্ত হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামটি। তিন বছর খেলা বন্ধ ছিল। এখন নিয়মিত টেস্ট হচ্ছে। ১৯৯৮ সালে প্রথম টেস্ট হয় গলে। এরপর গত ২৭ বছরে ৪৮টি টেস্ট হয়েছে। ফল হয়েছে ৪২টিতে এবং ছয়টিতে কোনো ফল হয়নি। গলে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত দুটি টেস্ট খেলেছে। প্রথমবার ২০১৩ এবং দ্বিতীয়বার ২০১৭ সালে। এক যুগ আগে ২০১৩ সালের টেস্টটি ড্র হয়েছিল। আট বছর আগে ২০১৭ সালে টাইগাররা হেরেছিলেন ২৫৯ রানে। ২০১৩ সালে প্রথমবার টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ মুশফিকের নেতৃত্বে। শ্রীলঙ্কা ৩ উইকেটে ৫৭০ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল। বাংলাদেশ ১৯৬ ওভার ব্যাটিং করে মুশফিকের ডাবল এবং আশরাফুল ও নাসিরের সেঞ্চুরিতে ৬৩৮ রান করেছিল। গলে যা তৃতীয় দলগত সর্বোচ্চ। দলগত সর্বোচ্চ স্কোর স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার ৩ উইকেটে ৭০৪। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২৩ সালে এ স্কোরটি করেছিল দ্বীপরাষ্ট্র। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, উইকেটে পেসারদের তুলনায় স্পিনারদের সাফল্য গগনচুম্বী। শ্রীলঙ্কার ২৭ জয়ের অধিকাংশই এসেছে স্পিনারদের হাত ধরে। এ মাঠের সেরা পারফরম্যান্স স্পিনারদের। সেরা ১০ উইকেট সংগ্রাহকের প্রায় সবাই স্পিনার। এ মাঠে ব্যক্তিগতভাবে শয়ের ওপর উইকেট রয়েছে মুত্তিয়া মুরলিধরন ও রঙ্গনা হেরাথের। মুরলিধরনের উইকেট ১৫ টেস্টে ১১১ এবং হেরাথের ১৯ টেস্টে ১০২টি। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট অফ স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের, ১ টেস্টে ৬টি। তাঁর সেরা বোলিং স্পেল ৪/১১৩। গলে সেরা বোলিং স্পেল মুরলিধরনের ৩১.৪-১৫-৪৬-৭। এ মাঠের একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান ক্রিস গেইল। ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৩৭ বলে ৩৪ চার ও ৯ ছক্কায় ৩৩৩ রান করেছিলেন ক্যারিবীয় লিজেন্ড। ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে ১২টি। পরিসংখ্যানে স্পিনারদের সহায়তা পাওয়ার কথা। কিন্তু আশরাফুল বলেন ব্যাটিংয়ের কথা, ‘সুনামির পর গলের উইকেটে পরিবর্তন এসেছে। মাটির আচরণ পরিবর্তন হয়েছে। স্পিনাররা ভালো করলেও রান উঠছে। খেলা হবে, প্রচ- গরমে। উইকেট অনেক বেশি শুষ্ক থাকবে। সে হিসেবে ব্যাটারদের রান করতে সহজ হবে।’
শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ শুধু দুটি টেস্ট নয়, তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-২০ খেলবে। ২০২২ সালের পর পুনরায় তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়কে খেলবেন টাইগাররা। টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, ওয়ানডে অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ ও টি-২০ অধিনায়ক লিটন দাস।