কোনো সমীকরণের প্রয়োজন হয়নি। আবাহনী-মোহামেডান অলিখিত ফাইনালটিকে সমীকরণের দিকে ঠেলে দেননি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মোহাম্মদ মিথুন। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ১৩৫ রানের জুটি আবাহনীকে শুধু ৬ উইকেটের সহজ জয় উপহার দেয়নি, ফের চ্যাম্পিয়ন করেছে। অথচ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে দলটি কঠিন সময় পার করছে। কাল অবশ্য ঐতিহ্যবাহী দলটির ডাবলস জেতার দিন হতে পারত। যদি ময়মনসিংহ জেলা স্টেডিয়ামে বসুন্ধরা গ্রুপ ফেডারেশন কাপের ১৫ মিনিটের ফাইনালে টাইব্রেকারে বসুন্ধরা কিংসের কাছে না হারত। কিন্তু হয়নি। ফেডারেশন কাপের শিরোপা জেতা না হলেও আবাহনী প্রায় নিজেদের করে নিয়েছে প্রিমিয়ার ক্রিকেটকে। ৫৬ বল আগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানকে হারিয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতেছে আবাহনী। সব মিলিয়ে ২৪ বার শিরোপা জিতেছে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেটের শিরোপা এবং সর্বশেষ ছয় আসরে পঞ্চমবার।
ক্যারিয়ারে প্রথমবার আবাহনীর হেড কোচের দায়িত্ব পালন করছেন হান্নান সরকার। অবশ্য এর আগে ২০১৪ সালে আবাহনীর ব্যাটিং কোচ ছিলেন টাইগারদের সাবেক ওপেনার। প্রথমবার কোচ হিসেবে শিরোপা জিতে উচ্ছ্বসিত হান্নান। তিনি বলেন, ‘টিম ম্যানেজমেন্ট কখনই আমার কাজে হস্তক্ষেপ করেনি। শুরু থেকেই আমাদের বিশ্বাস ছিল শিরোপা জিতব। ক্রিকেটাররা দারুণ খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’ আবাহনীর নিয়মিত অধিনায়ক ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলছেন বলে দলকে এখন নেতৃত্বে দিয়েছেন মোসাদ্দেক সৈকত। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানকে হারিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার পাশাপাশি শিরোপা জিতে উচ্ছ্বসিত সৈকত বলেন, ‘অতীতে আমাদের চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এবার শিরোপা জিতে আমরা জবাব দিয়েছি।’ আবাহনী এবার নিয়ে তিনবার হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতেছে। অর্থাৎ হ্যাটট্রিকের হ্যাটট্রিক শিরোপা আবাহনীর।
বসুন্ধরা প্রিমিয়ার ক্রিকেটের অলিখিত ফাইনালে মোসাদ্দেক বাহিনী গতকাল খেলতে নামে মোহামেডানের চেয়ে ২ পয়েন্ট এগিয়ে থাকার সুবিধা নিয়ে। ম্যাচটির সমীকরণ ছিল জিতলেই আবাহনীর শিরোপা অক্ষুণœ থাকবে। ২০০৯-১০ মৌসুমের পর শিরোপা জিততে মোহামেডানকে জিততেই হতো। জিতলে আবাহনীর বিপক্ষে পয়েন্ট সমান হতো। তখন ‘হেড টু হেড’ সমীকরণে চ্যাম্পিয়ন হতো রনি তালুকদারের মোহামেডান। এমন জটিল সমীকরণের ম্যাচে অসুস্থতার কারণে তামিম ইকবাল, নিষেধাজ্ঞার জন্য তাওহিদ হৃদয়, জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামকে পায়নি। আবাহনীও পায়নি নাহিদ রানা, নাজমুল শান্তকে। তারকা ক্রিকেটারদের ছাড়া ম্যাচে মোহামেডান প্রথম ব্যাটিংয়ে টস হেরে ৭ উইকেটে ২৪০ রানের মামুলি স্কোর গড়ে। এত রান করতে পারত না দলটি, যদি পঞ্চম উইকেট জুটিতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও আরিফুল ইসলাম ৯০ রান যোগ না করতেন। দুজনই সাজঘরে ফেরেন ৫০ রানের ইনিংসে। ২৪১ রানের টার্গেটে আবাহনী জয়োৎসব করে তিন হাফ সেঞ্চুরিতে। শুরুতে জিশান আলম ৫৫ রান করেন ৫৩ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায়। ১০৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আবাহনী যখন কোণঠাসা, তখন পঞ্চম উইকেটে ১২২ বলে ১৩৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন মোসাদ্দেক ও মিথুন। ম্যাচসেরা মোসাদ্দেক ৭৮ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন ৬৫ বলে ৬ চার ও ৫ ছক্কায়। মিথুন অপরাজিত থাকেন ৬৬ রানে। ৭৯ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৬টি চার ও ২টি ছক্কা।
চ্যাম্পিয়ন হয়ে আবাহনী ১৫ লাখ টাকা, রানার্সআপ মোহামেডান সাড়ে ১৩ লাখ টাকা আর্থিক পুরস্কার পায়। টুর্নামেন্ট সেরা মোসাদ্দেক সৈকত (৪৮৭ রান, ৩০ উইকেট) ৩ লাখ টাকা, সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক রাকিবুল হাসান ও মোসাদ্দেক ৩০টি করে উইকেট নিয়ে ৩ লাখ টাকা এবং সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এনামুল হক বিজয় ৮৭৪ রান করে ৩ লাখ টাকা পেয়েছেন।