বিপিএলে রানের পাহাড় গড়লেই বা কি! রংপুর রাইডার্স সেই পাহাড় অনায়াসেই টপকে যায়। গতকাল যেমন আরও একবার টপকে গেল। বিপিএলের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সেই মাঠে সিলেট স্ট্রাইকার্স সমর্থকদের মনে আশার সঞ্চার করল ২০০ পার করা ইনিংসে। ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে দলটা সংগ্রহ করল ২০৫ রান। হেসে-খেলে এ রানের পাহাড় ছয় বল হাতে রেখেই পাড়ি দিল রংপুর রাইডার্স। ২ উইকেট হারিয়ে ২১০ রান করে টানা চার জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল দলটি।
টি-২০ ক্রিকেটে ২০০ পার করা যে কোনো লক্ষ্য তাড়া করা সহজ কাজ নয়। কিন্তু অ্যালেক্স হেলসের মতো ব্যাটার দাঁড়িয়ে গেলে সেই লক্ষ্যও পাড়ি দেওয়া যায় অনায়াসে। গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গ্যালারিভরা দর্শক এর সাক্ষী হলো। সিলেট স্ট্রাইকার্সের ম্যাচ হওয়ায় গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। চার ছক্কার ফুলঝুরিতে ম্যাচটা জমিয়ে দেন রনি তালুকদার, অ্যারোন জোনস, জাকির হাসানরা। সিলেট স্ট্রাইকার্সের ব্যাটাররা দুই শ ছাড়ানো ইনিংস খেলতে ১৬টি ছক্কা হাঁকায়। চারটি করে ছক্কা হাঁকান জাকির হাসান ও অ্যারোন জোনস। কিন্তু সিলেটের ইনিংসটা ছিল ট্রেইলার। সিলেট পর্বের প্রথম ম্যাচের ক্লাইমেক্স ছিলেন অ্যালেক্স হেলস আর সাইফ হাসান।
অ্যালেক্স হেলসের বেশ সুনাম আছে টি-২০ ক্রিকেটে। তেরো হাজারেরও বেশি রান করেছেন তিনি বিভিন্ন টি-২০ লিগে। সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরিতে তার জুড়ি মেলা ভার। গতকাল আরও একবার হেলসকে দেখা গেল বিধ্বংসী রূপে। সিলেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে থাকা দর্শকদের স্তব্ধ করে দেন তিনি। যেসব দর্শক সিলেট স্ট্রাইকার্সের বড় জয় দেখবেন বলে আশা করেছিলেন, তাদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেন হেলস। তাকে সঙ্গ দেন সাইফ হাসান। তরুণ আজিজুল হাকিম তামিম শূন্য রানে সাজঘরে ফিরলে কী উল্লাসই না করেছিল সিলেটবাসী। কিন্তু এরপরই নির্মমভাবে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বোলারদের তুলোধুনো করেন অ্যালেক্স-সাইফ। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দুজন করেন ১৮৬ রান। সাইফ ৪৯ বলে ৮০ রান করেন ৭টি ছক্কা ও ৩টি চারে। হেলস ৭টি ছক্কা ও ১০টি চারে ১১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। স্কোর লাইনটা সাদামাটাভাবে বললে, গতকালের ইনিংসের গল্পটা খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই ইনিংস দুটির গুরুত্ব কেবল প্রত্যক্ষদর্শীরাই বলতে পারেন। আল আমিন, আরিফুল হক, নিহাদুজ্জামান, টোপলিরা একে বোলিংয়ে আসছেন আর হেলস-সাইফের ব্যাটের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছেন। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একইভাবে দৃশ্যগুলোর মঞ্চায়ন হতে থাকল সিলেট স্টেডিয়ামে। আর বুকভাঙা যন্ত্রণা নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে তাই দেখতে হলো সিলেটের দর্শকদের। তবে রংপুর রাইডার্সের সমর্থকরা নিশ্চয়ই গতকালের ম্যাচের পর পুলকিত হয়েছেন? এটা এমন এক দল, যাদের কোনোভাবেই আটকানো যাচ্ছে না! ২০০-এর বেশি টার্গেট দিয়েও পারা গেল না। এ সিলেটের বিপক্ষেই ঢাকার ম্যাচে মাত্র ১৫৫ রান করেছিল রংপুর রাইডার্স। তবে বল হাতে অল্প পুঁজিতেও দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন নাহিদ-খুশদিলরা। একের পর এক ম্যাচ জিতে নিজেদের আরও শক্তিশালী এক দলে পরিণত করেছেন নুরুল হাসান সোহানরা।
অ্যালেক্স হেলস এর আগেও বিপিএলে সেঞ্চুরি করেছেন। ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ৪৮ বলে ১০০ রান করেন হেলস। সেই ম্যাচে তার সঙ্গী রাইলি রুশো করেছিলেন ৫১ বলে ১০০ রান। বিপিএলে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি ক্রিস গেইলের (৫টি)। ২টি করে সেঞ্চুরি আছে বেশ কয়েক জনের। এ তালিকায় নাম লেখালেন অ্যালেক্স হেলসও।
গতকাল ম্যাচের পর হেলসের ইনিংস নিয়ে সাইফ হাসান বললেন, ‘অ্যালেক্স একজন অসাধারণ ব্যাটার। টি-২০তে ১৩ হাজারেরও বেশি রান করেছেন তিনি। সুযোগ পেলেই পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করি।’ সাইফ হাসানও গতকাল কম ছিলেন না। তিনি ১৬৩-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ৮০ রান করেছেন গতকাল। সিলেট-রংপুর ম্যাচে একটা রেকর্ডও হয়ে গেল। ছক্কার রেকর্ড। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩১ ছক্কা দেখল বিপিএলের দর্শকরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সিলেট স্ট্রাইকার্স : ২০ ওভারে ২০৫/৪ (রনি ৫৪, জাকির ৫০, জোন্স ৩৮*, জাকের ২০*; সাইফউদ্দিন ৪-০-৩১-২, মেহেদি ৪-০-৩৮-১, আকিফ ৪-০-৫১-১, নাহিদ ৪-০-৪৫-০)
রংপুর রাইডার্স : ১৯ ওভারে ২১০/২ (হেলস ১১৩*, সাইফ ৮০, ইফতিখার ৮*; তানজিম ৪-০-২৩-২, আল আমিন ৪-০-৫৩-০, টপলি ৪-০-৩৭-০, নিহাদউজ্জামান ৪-০-৪৪-০)
ফলাফল : রংপুর রাইডার্স ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা : অ্যালেক্স হেলস