আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে, কোন প্রক্রিয়ায় হতে যাচ্ছে তা নিয়ে হিসাবনিকাশ শুরু হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে। হিসাব করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার পর থেকে প্রশাসনে কর্মকর্তারা আরও হিসাবি হয়ে কাজ করবেন। যদিও এখনো অনেকে রুটিন কাজ করে দিন পার করছেন। কেউ কারও ওপর খুব একটা খবরদারিও করছেন না। ঈদের ছুটি শেষে গত কয়েক কর্মদিবস প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ঈদ আড্ডার পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা শোনা যায়।
ঈদের ৯ দিন ছুটি শেষে কর্মস্থলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগ দিলেও গত সপ্তাহজুড়েই ছিল ঈদের আমেজ। আলোচনা ছিল আগামীর নির্বাচন, রাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনেকেই নিজ গ্রামে রাজনৈতিক কী আলোচনা হয়েছে সে বিষয়েও কথা বলেন। গ্রামের মানুষ দেশের পরিস্থিতি আগামীর নির্বাচন নিয়ে এলাকার পদস্থ কর্মকর্তাদের সরাসরি কাছে পেয়ে নানা তথ্য জানতে চেয়েছেন বলেও জানান অনেক কর্মকর্তা। সাম্প্রতিক সময়ে ঈদের আগে গঠিত তরুণদের নতুন দল নিয়েও নানামুখী আলোচনা শোনা যায় সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের আড্ডায়।
আলোচনায় রয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচন হওয়ার বিষয়টি। খোদ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের মাঝামাঝি নির্বাচনের কথা। জনগণ কতটুকু সংস্কার চায়, তার ওপর নির্বাচনের সময়সূচি নির্ভর করছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্বাচনের সম্ভাব্য ধারণা পাওয়ার পর থেকে আমলারাও বিষয়টি নিয়ে নানামুখী হিসাব করছেন। বিগত সরকারের সময় যারা বেশি দলবাজ হয়ে গিয়েছিলেন তাদের পরিণতি নিয়েও বিভিন্ন কর্মকর্তার রুমে আলোচনা চলছে। ১৭ ব্যাচের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, হিসাব করেই কাজ করতে হয়। কাজ করব পরে একটা রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে বাড়াবাড়ি মনে করতে পারে। তাই রুটিন কাজ হচ্ছে। কোনো কাজ ফেলে রাখছি না। ২২ ব্যাচের এক যুগ্মসচিব বলেন, যেহেতু নির্বাচনের একটা আলোচনা অনেক দিন ধরেই হচ্ছে সবাই রাজনৈতিক সরকারই চায়। তারা কিছুটা সময় ক্ষমতায় থাকে, একটা লম্বা সময় পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যায়।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন নির্বাচন নিয়ে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে, হবে এটাই স্বাভাবিক। আগামীতে কে ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে তা না দেখে নিরপেক্ষভাবে কাজ করলে কোনো কর্মকর্তার কোনো সমস্যা হবে না। নির্বাচন নিয়ে আমলারা হিসাব করেন এটা স্বাভাবিক, তবে কেউ যেন দলীয়ভাবে না দেখে, দলবাজ না হয়। কাজের গতি কমানো, দলবাজি করতে গিয়ে আমলাতন্ত্র রাষ্ট্র নিজে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানরা যেন অতীত থেকে শিক্ষা নেয়। এদিকে অতীতে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসর, ওএসডি নিয়েও বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে ডিসি হিসেবে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ২২ কর্মকর্তাকে ফেব্রুয়ারিতে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। ২০১৮ সালে রাতের ভোটের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা তৎকালীন ৩৩ ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছে। একইভাবে পুলিশের এসপির দায়িত্বে ছিলেন, তাদেরও বাধ্যতামূলক অবসর ও ওএসডি করা হয়েছে। ফলে এবার নিরপেক্ষ ও সাহসী কর্মকর্তা খোঁজা হচ্ছে। অনেক কর্মকর্তা নির্বাচনের সময় মাঠে থাকবেন কি থাকবেন না সে হিসাবও কষছেন এখন থেকেই। এ ছাড়াও প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে কর্মরতরাও তদবির বা ঝামেলার কাজ এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ঈদের আগে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পদায়নের জন্য ২৫ এবং ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সেই ভাইভা দিতে অনেকেই অংশ নেননি।