ভবিষ্যতে জোটবদ্ধ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবে না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে আসন ছাড় দেবে। কমপক্ষে ৮০ থেকে ১০০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে যারা জাতীয় নির্বাচনে আসন ছাড়ের সহযোগিতা চাইবে তাদেরই এই ছাড় দেওয়া হবে। এর মধ্যে তরুণ ছাত্রনেতাদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিএনপির সঙ্গে কৌশলগত ঐক্য করতে চাইলে তাদেরও এই আসন ছাড় দেবে বিএনপি। এ নিয়ে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে। সারা দেশে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা তৈরি করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোটের বেশির ভাগ শরিক দল তথা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনি আসন বণ্টন নিয়েও আলোচনা চলছে। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, এলডিপি, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জোট, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিজেপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, বিভিন্ন ইসলামি, বামপন্থি দলসহ সর্বস্তরের দলের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা চলছে। বিএনপি চায় সব দলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে আসুক। নির্বাচনের পর আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সরকার গঠন করে সবাই মিলে রাষ্ট্র মেরামতের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই দলটির অভীষ্ট লক্ষ্য। এ লক্ষ্য সামনে রেখেই গত দুই বছর আগে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নির্বাচনের আগে নতুন জোট হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছে সেই দলগুলোর সঙ্গে একটা সমঝোতা হতেই পারে। তা ছাড়া ডান ও বামপন্থি অন্য দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট হতেই পারে। এটা সময়মতোই পরিষ্কার হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলের সদস্যদের মতে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে অনড় বিএনপি। দলটি এই দাবির পক্ষে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন পাচ্ছে। এখন ডান ও বামপন্থি আরও গুরুত্বপূর্ণ দলের সমর্থন নিয়ে বিএনপি বড় প্ল্যাটফর্ম গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। ৬ এপ্রিল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। ওই বৈঠকে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের যে দাবি তুলেছে, তাতে হেফাজত একমত পোষণ করেছে। এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনের শরিকদের বাইরে অন্য দলগুলোর আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক চলছে। এসব বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জোরালো উঠছে এবং এ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দ্রুত আরও কর্মসূচি পালন করা হবে। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, বিএনপির উচ্চপর্যায়ের অনেকে কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে মত দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন এবং এই লক্ষ্যে দ্রুত রোডম্যাপ দেওয়ার দাবিসহ কয়েকটি বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ ও বৈঠক করার কথা রয়েছে। এ বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ও দ্রুত রোডম্যাপের বিষয়ে সরকারের অবস্থান তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চাইবেন। প্রত্যাশিত ঘোষণা না এলে অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছু নেই। নির্বাচনের আগে জোট গঠন হবে, না আসন সমঝোতা হবে- তা সময়ই বলে দেবে। তবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের আন্দোলনে যাঁরা যুগপৎভাবে অংশ নিয়েছেন, জনগণের রায় পেলে নির্বাচনের পর তাঁদের সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই সরকার এসে রাষ্ট্র মেরামতের কাজ করবে। সেভাবেই কার্যক্রম চলছে।’