জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার ভারত। ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সাল ছিল রেকর্ড উষ্ণতম বছর। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতসহ বিশ্বের একাধিক দেশ। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারতীয়রা বছরে গড়ে প্রায় ২০ দিন তাপপ্রবাহের শিকার হয়েছেন।
ল্যানসেট জার্নালের রিপোর্টের অনুযায়ী, ২০২৪ সালে অত্যধিক গরমের কারণে শ্রমের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর ফলে বছরে ২৪৭ বিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে ভারতে। এই ক্ষতির পরিমাণ প্রতি ব্যক্তি পিছু প্রায় ৪২০ ঘণ্টা, যা ১৯৯০-৯৯ দশকের চেয়ে ১২৪ শতাংশ বেশি।
'দ্য ল্যানসেট কাউন্টডাউন অন হেলথ অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ'-এর ২০২৫ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, এই ক্ষতির ৬৬ শতাংশ হয়েছে কৃষি খাতে এবং ২০ শতাংশ হয়েছে নির্মাণ শিল্পে। প্রবল উষ্ণতার কারণে শ্রম ক্ষমতা হ্রাসের সঙ্গে ২০২৪ সালে ভারতের সম্ভাব্য ১৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১৭১ হাজার কোটির বেশি) আয়ের ক্ষতি হয়েছে।
লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের নেতৃত্বে ৭১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় রাষ্ট্রপুঞ্জের ১২৮ জন বিশেষজ্ঞের একটি দল ল্যানসেট কাউন্টডাউন ২০২৫-র বার্ষিক সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করেছে। রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, তাপপ্রবাহের ফলে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে জনজীবনের উপরে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির উপরে মানুষের নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ছে। এমনকি, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন ভারতের সাধারণ মানুষ। যার জেরে ঝুঁকির মুখে পড়ছে মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবিকা। ল্যানসেট জার্নালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাপপ্রবাহজনিত মৃত্যু ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৫০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও। ল্যানসেট জার্নালের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট, ‘২০২৪ সালে, ভারতে প্রতি ব্যক্তি বছরে গড়ে ১৯.৮ দিন তাপপ্রবাহের শিকার হয়েছেন।’
ল্যানসেট জার্নালের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে ভারতে অগ্নিকাণ্ড থেকে হওয়া দূষণের ফলে বছরে গড়ে ১০ হাজার ২০০ মৃত্যু ঘটেছে। যা ২০০৩-২০১২ সালের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি। এই মৃত্যুর ৪৪ শতাংশ কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। পাশাপাশি, অন্যান্য কারণে ২.৬৯ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল