রহস্যে ঘেরা আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু ধূমকেতু থ্রি-আই/অ্যাটলাস আগামী ২৯ অক্টোবর সূর্যের সবচেয়ে কাছের বিন্দুতে পৌঁছাবে। সেদিন এটি সূর্য থেকে প্রায় ১.৩৬ জ্যোতির্বিদ্যা একক দূরত্বে অতিক্রম করবে। এটি মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথের প্রায় সমান।
নাসার তথ্যমতে, এই দিনে ধূমকেতুটি প্রায় ৩৩ গিগাওয়াট সৌর বিকিরণের মুখে পড়বে। এতে এর গতি বা কক্ষপথে পরিবর্তন ঘটতে পারে। কেউ কেউ ধারণা করছেন যদি এটি প্রাকৃতিক না হয়, তবে সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ ব্যবহার করে এটি পৃথিবীর দিকে মোড় নিতে পারে।
থ্রি-আই/অ্যাটলাসের আচরণ সাধারণ ধূমকেতুর মতো নয়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এর লেজ সূর্যের বিপরীতে নয় বরং সূর্যের দিকেই ছুটছে—যা ধূমকেতুর স্বাভাবিক নিয়মের পুরো বিপরীত। সাধারণত সূর্যালোক ও সৌরবায়ু ধূমকেতুর ধুলো ও গ্যাসকে সূর্য থেকে দূরে ঠেলে দেয়।
তবে সেপ্টেম্বরে স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের নর্ডিক অপটিক্যাল টেলিস্কোপে দেখা যায়, থ্রি-আই/অ্যাটলাসের এই অস্বাভাবিক লেজ উল্টো দিকে ঘুরে গেছে। আরও বিস্ময়কর বিষয় হলো, ধূমকেতুর বায়ুমণ্ডলে পাওয়া গেছে নিকেল টেট্রাকার্বনাইল নামের এক যৌগের উপস্থিতি, যা পৃথিবীতে ধাতু পরিশোধনের সময় শিল্পকারখানায় তৈরি হয়। কোনো প্রাকৃতিক ধূমকেতুতে এর অস্তিত্ব আগে কখনো দেখা যায়নি।
নাসার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, থ্রি-আই/অ্যাটলাসের কক্ষপথ হাইপারবোলিক অর্থাৎ এটি আমাদের সৌরজগতের বাইরের কোনো স্থান থেকে এসেছে এবং সূর্যের কাছ দিয়ে ঘুরে আবার চলে যাবে। হাবল টেলিস্কোপে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, এর বরফে আচ্ছাদিত কেন্দ্রের চারপাশে অশ্রুবিন্দুর মতো আকৃতির ধূলিমেঘ রয়েছে। কেন্দ্রটির আকার প্রায় ৪৪০ মিটার থেকে ৫.৬ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যাভি লোয়েব মনে করেন, থ্রি-আই/অ্যাটলাস হয়তো প্রকৃত ধূমকেতু নয়। তিনি বলেন, ‘আমার সহকর্মী অ্যাডাম হিবার্ডের ধারণা, যদি এটি কোনো ভিনগ্রহী মহাকাশযান হয় যা গতি কমাচ্ছে, তবে সূর্যের বিপরীতে থাকা লেজটি হতে পারে এর ব্রেক থ্রাস্ট। সূর্যের কাছাকাছি এসে দিক পরিবর্তন করলে সেটি নিয়ন্ত্রিত গতিবিধির প্রমাণ হতে পারে, যা কোনো প্রযুক্তিগত সংকেত হিসেবে ধরা যায়।
নাসা জানিয়েছে, থ্রি-আই/অ্যাটলাস সূর্যের কাছাকাছি গেলেও পৃথিবীর জন্য কোনো বিপদ তৈরি করবে না। এটি পৃথিবী থেকে অন্তত ২৭০ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর দিয়ে অতিক্রম করবে। তাই এ নিয়ে আতঙ্কের কারণ নেই।
বর্তমানে নাসার হাবল, জেমস ওয়েব, পার্কার সোলার প্রোবসহ একাধিক মহাকাশযান এই রহস্যময় বস্তুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে, যাতে এর প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটন করা যায়।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল