বিজ্ঞান আর নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস দাবি করে একসময় পৃথিবীর বুকে দাপিয়ে বেড়িয়েছে বিশালাকায় ডাইনোসর। তাদের বিলুপ্তি নিয়েও আছে নানা তত্ত্ব। তবে সম্প্রতি একদল গবেষক দাবি করেছেন ডাইনোসরের বিলুপ্তি আদৌ অনিবার্য ছিল না! আজ থেকে সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে ডাইনোসররা বরং সংখ্যায় বাড়ন্তই ছিলো। বিশাল গ্রহাণু এসে পৃথিবীকে ধাক্কা না মারলে এত দ্রুত তাদের বিলুপ্তি সম্ভব ছিল না বলে দাবি করা হচ্ছে নতুন গবেষণায়। এই তথ্য প্রতিষ্ঠিত হলে ডাইনোসরদের নিয়ে দীর্ঘ দিনের প্রচলিত ধারণা বদলে যেতে পারে। বদলে যেতে পারে ইতিহাস!
নিউ মেক্সিকো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ফ্লিনের নেতৃত্বে এক দল বিজ্ঞানী প্রাচীন পাথর নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ডাইনোসরদের ইতিহাস সম্পর্কে চমকপ্রদ সব তথ্য পেয়েছেন। তাদের দাবি, গ্রহাণু বিপর্যয়ই ডাইনোসরদের বিলুপ্তির একমাত্র সম্ভাব্য কারণ। অন্তত উত্তর আমেরিকার ক্ষেত্রে এই তথ্যকে তারা সঠিক বলে মনে করছেন। পৃথিবীর বাকি অংশের জন্য ডাইনোসর সংক্রান্ত আরও গবেষণা প্রয়োজন।
সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে ক্রিটেসিয়াস যুগ চলছিল পৃথিবীতে। সে সময়ে প্রকাণ্ড গ্রহাণুর ধাক্কায় লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল পৃথিবী। বহু প্রজাতির সঙ্গে পৃথিবীর বুক থেকে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ডাইনোসরেরাও। বেঁচে যায় কেবল পাখি। এখনও অনেক পাখি প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরের উত্তরাধিকার বহন করছে। বিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য ছিল, ডাইনোসরেরা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই ক্রমশ বিলুপ্তির দিকে এগোচ্ছিল। পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিল না। অতিরিক্ত হিংস্র স্বভাবও তাদের কাল হয়েছিল। গ্রহাণু বিপর্যয় সেই বিলুপ্তি নিশ্চিত করেছে মাত্র। ডাইনোসর সংক্রান্ত এত দিনের প্রচলিত সেই ধারণায় এ বার ধাক্কা লাগল। ফ্লিনের কথায়, আমাদের গবেষণা দেখাচ্ছে, অন্তত উত্তর আমেরিকায় ডাইনোসরেরা বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছিল না। দিব্যি ছিল।
মেক্সিকোর বিজ্ঞানীদের দাবি, নিউ মেক্সিকোর একটি বিশেষ ধরনের শিলার উৎপত্তির সময়কাল খুঁজতে গিয়ে ডাইনোসরদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণায় প্রথম সন্দেহ জাগে। মূলত দু’টি পদ্ধতিতে ওই শিলার উৎপত্তিকাল খোঁজা হয়েছে। প্রথমত, শিলার মধ্যে পাওয়া স্ফটিকের দু’টি আর্গন আইসোটোপের অনুপাত বিশ্লেষণ, যার মাধ্যমে শিলার সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারিত হয়। দ্বিতীয়ত, শিলা গঠনের উপাদানের মধ্যেকার চৌম্বকীয় কণার সারিবদ্ধতা বিশ্লেষণ করা হয়, যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সময়ে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের দিক নির্ধারণ করা যায়। এই দুই পদ্ধতির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে উপনীত হন ডাইনোসরদের গণবিলুপ্তির সাড়ে তিন লক্ষ বছর আগে ওই শিলা তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু এই শিলার সঙ্গে ডাইনোসরের সম্পর্ক কী? এগুলি নাশোইবিটো শিলা গোত্রের অন্তর্গত। ডাইনোসরের সবচেয়ে কমবয়সি জীবাশ্মটি নিউ মেক্সিকোর ওই শিলাতেই পাওয়া গিয়েছিল। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই সময়ে উত্তর আমেরিকার দক্ষিণাংশের ডাইনোসরেরা যথেষ্ট বৈচিত্র্যময় ছিল। ফ্লিন বলেন, উত্তর আমেরিকায় এমন কোনও ডাইনোসর ছিল না, যারা বিলুপ্তির কাছাকাছি পৌঁছেছিল। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ ব্রুসেট জানান, উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার ডাইনোসরদের মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে তফাৎ রয়েছে। কিন্তু গ্রহাণু বিপর্যয়ের আগে পর্যন্ত এই ডাইনোসরেরা নির্দিষ্ট কোনও সঙ্কটে ছিল, এমন প্রমাণ মেলেনি। ওটাই বিলুপ্তির একমাত্র সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।’
নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানী মহল উদ্বেলিত। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল বেন্টনের কথায়, নিউ মেক্সিকোতে এত দীর্ঘ সময় পরেও ডাইনোসরদের বেঁচে থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এটা দারুণ ব্যাপার। অন্তত একটা জায়গায় হলেও এই প্রাণীরা বৈচিত্র্যপূর্ণ ছিল। তবে এই গবেষণা শুধু বিশেষ একটি স্থানকেন্দ্রিক, মনে করিয়ে দিয়েছেন বেন্টন। সমগ্র পৃথিবী তো বটেই, এমনকি সমগ্র উত্তর আমেরিকার ক্ষেত্রেও এই গবেষণার সারমর্ম প্রযোজ্য হবে কি না, তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। এর জন্য অন্যত্র আরও বিশদ গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল