উটাহ’র একটি বায়ুদূষণপ্রবণ অঞ্চলে পরিচালিত এক ছোট পরিসরের গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ইঙ্গিত পেয়েছেন, পরিবেশে ক্ষতিকর কণার উপস্থিতি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (অ্যানিউরিসম রাপচার) সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ উটাহ’র নিউরোসার্জন ড. রবার্ট রেনার্ট। তিনি জানান, আমরা দেখতে পাচ্ছি বায়ুদূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ের ৩ থেকে ৬ মাস পর রোগীদের মধ্যে অ্যানিউরিসম রাপচারের হার বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসে ভেসে থাকা ওজোন, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড এবং ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট কণাগুলি (পিএ২.৫) আমাদের শরীরে জ্বালাভাব সৃষ্টি করে। এগুলিই বার্ষিক প্রায় ৮ মিলিয়ন মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে অনুমান।
গবেষণাটি হয়েছে ‘ওয়াসাচ ফ্রন্ট’ অঞ্চলে, যা উটাহ’র উত্তরে পাহাড় ও হ্রদের মাঝে অবস্থিত। এখানকার ভূপ্রকৃতি এবং জলবায়ুর কারণে বায়ুদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। রেনার্ট ও তার দল এই অঞ্চলে ৭০ জন রোগীর ওপর পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন, যাদের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল।
তাপমাত্রা, মৌসুমি পরিবর্তন ও বায়ুচাপের মতো পরিবেশগত ভিন্নতা হিসাব করে দেখা গেছে, সর্বোচ্চ পিএ২.৫ স্তরের কয়েক মাস পর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
গবেষকরা সরাসরি কোনো কারণ সম্পর্ক প্রমাণ করতে না পারলেও তাদের সন্দেহ, দীর্ঘমেয়াদে দূষণ আমাদের দেহের কোষে এমন ক্ষত তৈরি করে যা রক্তনালীর দেয়াল দুর্বল করে ফেলে। ফলে একসময় তা ফেটে গিয়ে ব্রেইন হেমোরেজের কারণ হয়।
রেনার্ট বলেন, “পিএ২.৫ কীভাবে কোষ বা স্থানিকভাবে প্রদাহ সৃষ্টি করে, তা বোঝার জন্য ভবিষ্যতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।”
বায়ুদূষণের ফলে শুধু রক্তক্ষরণ নয় আরও বহু স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। যেমন, তা উষ্ণতার প্রভাবকে বাড়িয়ে তোলে, কোভিড-১৯ সংক্রমণও মারাত্মক করে তোলে।
যদিও চীনসহ কিছু দেশ বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, অনেক দেশেই এর মাত্রা বেড়েই চলেছে।
ড. রেনার্ট বলেন, আমরা চাই, এই গবেষণা মানুষকে বায়ুদূষণের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করুক এবং সমাজে কিছু পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা দিক।
তার মতে, গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া, দৈনিক দূষণের সীমা নির্ধারণে কঠোর নিয়ম চালু করা এবং পরিবেশভিত্তিক গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো—এই সবকিছুই আমাদের শারীরিক সুস্থতার পক্ষে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক ফল দেবে।
সূত্র: সায়েন্স এলার্ট
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল