প্রতি বছর ৯ আগস্ট তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে পালন করা হয় আদিবাসী দিবস। আর এ দিবস ঘিরেই উত্তেজনা দেখা যায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে। ‘আদিবাসী’ বিতর্ক উসকে দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলকে অশান্ত করা হয় বলে দাবি পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে কাজ করা নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তারা জানান, প্রতি বছর এ দিবসকে কেন্দ্র করে পার্বত্য জেলাগুলোতে খুনোখুনি, মারামারি, চাঁদাবাজি আর আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে ওঠে সশস্ত্র উপজাতি সংগঠনগুলো। এতে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে কাজ করা নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা জানান, বাংলাদেশের সংবিধানে আদিবাসীর স্বীকৃতির উল্লেখ নেই। কারণ বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেই। সংবিধানের ২৩/ক অনুচ্ছেদে বাংলাদেশে বসবাসরত বাঙালি ব্যতীত অন্যান্য ভাষাভাষী ও ভিন্ন সংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জনগোষ্ঠীকে উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই উপজাতীয় নেতৃত্ব বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার ছিল। তবে ২০০৮ সালের আগে তারা কখনোই নিজেদের আদিবাসী হিসেবে দাবি করেনি। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ও পিসিজেএসএস এর মধ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি ব্যতীত অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষকে উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের দাবি, শান্তি চুক্তিতে মোট ১৭ বার উপজাতি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত বিভিন্ন আইন যেমন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনে উপজাতি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো প্রকার চুক্তি, আইন ও নথিপত্রে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। এসব চুক্তি ও আইনে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করার জন্য উপজাতীয়দের আইন প্রণয়নে বিরোধিতা করতেও দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৬১তম অধিবেশনে আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। উল্লিখিত ঘোষণাপত্রে আদিবাসীদের জন্য প্রচুর সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। ২০০৭ সালের শেষ দিকে ঘোষিত জাতিসংঘের আদিবাসী ঘোষণাপত্রের সুবিধা নিতেই মূলত উপজাতী নেতারা ২০০৮ সাল থেকে নিজেদের আদিবাসী দাবি করা শুরু করেন। শুরুর দিকে অনেক উপজাতী নেতা আদিবাসী দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যা দেন। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমাও শুরুতে আদিবাসীর স্বীকৃতির বিপক্ষে ছিলেন এবং এটিকে উপজাতিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছিলেন। তবে পরে যখন তারা উপলব্ধি করেন যে, আদিবাসী স্বীকৃতির মাধ্যমে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে তখন তারাও আদিবাসী দাবির পক্ষে অবস্থান নেন। তারা জানান, ২০০৭ সালে ঘোষিত জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্রে মোট ৪৬টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। অনুচ্ছেদগুলোর বেশ কিছু ধারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখ তা, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ও সংবিধানের পরিপন্থি। উপজাতি জনগোষ্ঠীর দাবি, তাদের জন্য আলাদা অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করতে হবে। কিন্তু নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অভিমত, উপজাতি জনগোষ্ঠী সারা দেশে ছড়িয়ে থাকায় তাদের জন্য একটি আলাদা অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করা সম্ভব নয়। তারা আরও জানান, উপজাতিদের আদিবাসী স্বীকৃতির অনৈতিক দাবি মেনে নেওয়া হলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।