নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স এলাকায় ডজনখানেক প্রতারক চক্র রয়েছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশি ছাড়াও ভারতীয় এবং পাকিস্তানিরা যুক্ত। কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা এবং চাঁদার বিনিময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঞ্চে ওঠা কিংবা সংবর্ধনা পাওয়া অথবা মেয়র, গভর্নর, সিনেটর-কংগ্রেসম্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছ থেকে ক্রেস্ট অথবা সাইটেশন গ্রহণের মাধ্যমে সহজসরল প্রবাসীদের সামনে ‘জনদরদি’ ‘সমাজসেবক’ ইত্যাদি লেবাসে আবির্ভূত হচ্ছেন এ চক্রের সদস্যরা। কেউ কেউ পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে দহরম-মহরমকেও এ অপকর্মের অন্যতম অবলম্বনে পরিণত করেছেন।
এ চক্রের শিকার প্রবাসী ফখরুল আলম জানান, বারবার ফোন করে তাকে হুমকি দেওয়া হয় বাসা ত্যাগের জন্য। গত মাসের ২ তারিখ সপরিবারে তিনি ক্যানসাস গমন করেছিলেন। ৯ জুলাই ফিরে দেখেন নর্দার্ন বুলেভার্ডে তার বাসায় তালা ভেঙে চুরি হয়েছে। সবকিছু তছনছ করা হয়েছে। ৪ হাজার ডলার, স্বর্ণালংকার, ৫টি পাসপোর্ট, গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসহ পোশাক-আশাক সবকিছু চুরি হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি ঘটনার পুরোটা পুলিশকে জানিয়েছেন। ৩টি মামলাও করেছেন কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে। এরপর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ডিটেকটিভ তদন্ত শুরু হয়। তবে এ পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। ফরিদপুর অঞ্চলের সন্তান ফখরুল আরও জানান, বাড়িটির প্রকৃত মালিক বাংলাদেশি সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল। জাল দলিল করেছে দুর্বৃত্তরা। আগে থেকেই আমি ভাড়ায় রয়েছি এ বাসায়। সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল জানান, তার কেনা বাড়ির মধ্যে ৪টির দলিল জালিয়াতি করে অনেক হয়রানি করেছে দুর্বৃত্ত চক্রটি। আর এ অপকর্ম চালায় রিয়েল এস্টেট এজেন্ট/ব্রোকার হিসেবে পরিচিতরা। অপর ভুক্তভোগী জ্যামাইকার ৮৬-৮৪ ১৮৮ স্ট্রিটের বাসিন্দা জাহিদ এ খান (৪১) বলেন, দুর্বৃত্ত চক্রের সদস্য আদিল ও নাবিল যাতে আমার আশপাশে না আসতে পারে সেজন্য কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্ট থেকে ১৩ জুলাই একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে এবং সেটি বহাল থাকবে সামনের বছর ১২ জুলাই পর্যন্ত। জাহিদ এ খান জানান, কুইন্সের চক্রটি রিয়েল এস্টেট এজেন্ট/ব্রোকার হিসেবে আবির্ভূত হয়ে বাড়ি ক্রয়ে আগ্রহীর সব তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার পরই শুরু করে দুর্বৃত্তপনা।
বাড়ি ক্লোজিংয়ের পর্যায়ে অথবা ক্লোজিংয়ের পর ক্রেতার স্বাক্ষর জাল করে ওরা। তিনি বলেন, এখন আমার স্ত্রী এবং মায়ের স্বাক্ষর জাল করে ২৬৩১ ৯৮ স্ট্রিট, ইস্ট এলমহার্স্ট এবং ২৪৪৩১ ৮৮ রোড, বেলরুজের বাড়ি দুটি দেখলের চেষ্টা করছে। এ দুটির ভাড়াটে তাড়িয়ে ওরা নতুন লোককে ভাড়া দিয়েছে এবং মাসিক ভাড়া ওঠাচ্ছে। অথচ প্রকৃত মালিক হিসেবে আমাদেরই ব্যাংক-ঋণের মাসিক কিস্তির যাতনা সইতে হচ্ছে। একইভাবে নোয়াখালীর সন্তান আনোয়ারুল কবির রানা এ চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। আদালতে দৌড়াচ্ছেন খোয়া যাওয়া অর্থ উদ্ধারের জন্য। অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, ভারতীয়, পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি কয়েকজনের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই দুর্বৃত্ত চক্র মাঝেমধ্যেই নানা পরিচয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। এরা স্টেট গভর্নর, সিটি মেয়র, ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি, স্টেট সিনেটর, স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান, কংগ্রেসম্যান অথবা সিনেটরের পাশে দাঁড়িয়ে ছবিতে পোজ দেওয়া ছাড়াও কমিউনিটিভিত্তিক কোনো কোনো সমাবেশে অতিথি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এ কারণে নবাগত প্রবাসীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন এবং তাদের ‘ভালো মানুষ’ ভেবে ব্যবসা অথবা রিয়েল এস্টেট সেক্টরে ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন। এদের কেউ কেউ বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা কিংবা সমাজকল্যাণমূলক সংগঠনের একজন হিসেবে পরিচয় দিয়েও সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে।