আমেরিকায় বেড়ে উঠা সাবরিনা মাহমুদ ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে ১৯ সহস্রাধিক কর্মচারিবিশিষ্ট বহুজাতিক ইন্স্যুরেন্স এবং ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ‘টিআইএএ’র সিনিয়র ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত। তার নাম রয়েছে সংস্থাটির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের তালিকায়। সাবরিনা শৈশব থেকেই মেধাবি এবং স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির প্রতিটি ক্লাসেই মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তবুও তিনি চিকিৎসক অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাননি। তার মা-বাবাও চাপ দেননি চিকিৎসক/ইঞ্জিনিয়ার হবার জন্য। অর্থাৎ বিশেষ কৃতিত্বের সাথে ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় ছাড়াও উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করলে বিশাল আয়ের চাকরির পাশাপশি নিজের শ্রেষ্ঠত্বও প্রদর্শন করা কঠিন হয় না।
সাবরিনা মাহমুদের বাবা নিউজার্সির মনমাউথ ইউনিভার্সিটির ডীন এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্কুল অব সোস্যাল ওয়ার্ক’র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. গোলাম মাতবর এসব তথ্য উপস্থাপন করেন ১১ জুলাই নিউইয়র্কে ‘ফাউন্ডেশন ফর বেটার ওয়ার্ল্ড’র ইউথ ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত এক সেমিনারে। ড. মাতবর ‘বিল্ড এ বেটার টুমরো টুগেদার’ স্লোগানে এই সেমিনারে ছিলেন মূল বক্তা এবং নিজের একমাত্র সন্তানের এগিয়ে চলার ব্যাপারটি দিয়েই উপস্থিত সকল তরুণ-তরুণীকে আশ্বস্ত করেন। কারণ, এই সেমিনারে অন্য বক্তারা অভিমত পোষণ করেছেন যে, বাংলাদেশি এবং দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ অভিভাবকই সন্তানের উপর চাপ প্রয়োগ করেন ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য। তা না হলে সন্তানের জীবনটাই বৃথা বলেও অনেক অভিভাবক মনে করেন। এধরনের চাপে পড়ে অনেক সন্তানই বিব্রতবোধ করেন এবং নিজের মত করে জীবন গড়ার স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ড. গোলাম মাতবর বলেন, আমেরিকা হচ্ছে ভাগ্য গড়ার অপূর্ব একটি দেশ, যেখানে সকল পেশাতেই অসাধারণ সাফল্য দেখানো যায়, আয়-উপার্জনও অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অনেক আমেরিকানই বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। আমার একমাত্র সন্তান বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। তাকে কেউ থামিয়ে রাখতে পারছে না। কারণ সে অসম্ভব মেধাবি এবং অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। এটাই হচ্ছে এগিয়ে চলার রহস্য। তাই সকল অভিভাবকেরই উচিত সন্তানের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া এবং সেজন্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা।
জ্যাকসন হাইটসে সানাই রেস্টুরেন্টের পার্টি হলে ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের উদ্বোধনী এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসুলেটের হেড অব চ্যান্সেরি ইসরাত জাহান।
অতিথি বক্তার মধ্যে আরো ছিলেন আসালের জাতীয় প্রেসিডেন্ট মাফ মিসবাহ উদ্দিন, মামুন টিউটোরিয়ালের সিইও শেখ আল মামুন, খান্স টিউটোরিয়ালের সিইও ডা. ইভান খান, আননূর কালচারাল সেন্টারের প্রিন্সিপাল মুফতি মোহাম্মদ ইসমাইল, জ্যামাইকা ফ্রেন্ড সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্টের প্রেসিডেন্ট শাহ শহিদুল হক, ফ্লাশিং ব্যাংকের বিজনেস স্পেশালিস্ট সিলভিয়া প্লাসেনসিয়া, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল কাদের, হোমকেয়ার ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ, ইউটিউবে জনপ্রিয় মুখ প্রিসিলা ফাতেমা, নিউইয়র্কস্থ সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি থমাস রাফায়েল, কম্যুনিটি এ্যাক্টিভিস্ট শিউলি আকতার, আতিকুর রহমান প্রমুখ। হোস্ট সংগঠনের যুব বিষয়ক পরিচালক ফারহান আব্দুর রহমান ছিলেন মধ্যমণি। তার চেষ্টায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছিলেন এ অনুষ্ঠানে। তারা মা-বাবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন উদারচিত্তে সহায়তার জন্য। তাহলে তাদের আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের পথ সুগম হবে। কয়েকজন তরুণ বক্তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী পদক্ষেপের সমালোচনা করেন এবং গাজা ইস্যুতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের নানাভাবে নাজেহালের প্রসঙ্গ উপস্থাপন করে বলেন, এরফলে আমেরিকার মূল্যবোধ প্রশ্নবিদ্ধ হতে চলেছে। তরুণ-তরুণীদের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন মালিহা রহমান, রাইসা তাইয়্যেবা, নাবিলা আহমেদ, এস এম আবিদ ইবতিহাজ এবং ফাউন্ডেশন ফর বেটার ওয়ার্ল্ডের প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান। সমগ্র অনুষ্ঠানের চমৎকার উপস্থাপনা করেন সোনিয়া।
কম্যুনিটির সামগ্রিক কল্যাণে নিরন্তরভাবে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি ওম্যান জেনিফার রাজকুমার ‘ফাউন্ডেশন ফর বেটার ওয়ার্ল্ড’র প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান এবং পরিচালক ফারহান আব্দুর রহমানকে বিশেষ সম্মাননা সার্টিফিকেট (প্রক্লেমেশন) প্রদান করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন