গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় গ্রেপ্তারদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত দুই দিনে ৭ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হলে সেগুলোও নামঞ্জুর করা হয়। কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সহিংসতার পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। একাধিক শিশুর অভিভাবকের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ শহরের মিয়াপাড়ার এক শিঙাড়া-পুরি বিক্রেতা জানান, তার ছেলে ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় প্যারাসিটামল কিনতে শহরের চৌরঙ্গী এলাকায় গেলে পুলিশ তাকে আটক করে। সে গোপালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। এখনো তার জামিন হয়নি। আরেক শিশুর বাবা জানান, তার ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করার সময় পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, সহিংসতার দিন আমার ছেলে বাড়িতে ছিল। পরদিন সন্ধ্যায় মাদরাসার সামনে চটপটি খেতে গেলে সেখান থেকে তাকে পুলিশ ধরে। আমার ছেলে গ্যাঞ্জামের ছেলে না, মাদরাসায় পড়ে। থানায় অনেক বলেছি, কিন্তু কেউ কিছু শোনেনি। জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ তার। তবে তিনি কারও নাম বলতে চাননি। গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এ শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। গোপালগঞ্জের সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প কয়েক দিন আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।