আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ জুলাই মাস পর্যন্ত সময় দেবে বিএনপি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে আয়োজনের আওয়াজ আরও জোরালো করার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপির আশা, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার যে অবস্থান নিয়েছে; সরকার তা পুনর্বিবেচনা করবে।
ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ জুলাই পর্যন্ত সময় দেবে বিএনপি। এই সময়ে দলটি নির্বাচন প্রশ্নে কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবে। তবে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর ব্যানারে বিভিন্ন আলোচনা সভা-সমাবেশ বা সেমিনারের মাধ্যমে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবির আওয়াজ জোরালো করবে বিএনপি।
পাশাপাশি নিজেদের পক্ষে দলের পাল্লা ভারী করা এবং সুশীল সমাজের সর্মথন আদায়ের চেষ্টা করবে দেশের বৃহত্তম এই রাজনৈতিক দলটি। এরই অংশ হিসেবে যারা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে এমন ১৮টি দলকে নিয়ে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণঅধিকার পরিষদের ব্যানারে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সূত্র আরও জানায়, এর মধ্যে যদি সরকারের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন না হয়, নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না আসে, তাহলে জুলাইয়ের শেষদিকে নির্বাচন আদায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে মাঠের কর্মসূচি শুরু করবে বিএনপি। সূত্রটি জোর দিয়ে বলেছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকেই স্বপদে বহাল রেখেই জাতীয় নির্বাচন চায় দলটি।
এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন জাতীয়ভাবে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। নির্বাচন সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। অপরাধীদের বিচার স্বাধীনভাবে চলবে। এই সরকারের পরে যারা ক্ষমতায় আসবে, তাদের সেটা টেনে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে এবং বিদেশে বসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির করতে অনেক চেষ্টা হয়েছে। অস্থির পরিস্থিতি বন্ধের উপায় হলো, একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি প্রতিষ্ঠিত করা।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেটি যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে ততই জাতির জন্য মঙ্গল। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারি নিয়ে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন, প্রস্তাবিত বাজেট, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দুই দিনের বৈঠক ও আসন্ন ঈদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সচিবালয়ে আন্দোলন চলছে। সরকার ও সচিবালয়ে কর্মকর্তারা এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এই বিষয়টি সমাধানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্কতার সঙ্গে কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেওয়া উচিত।
এদিকে প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার বাজেটের প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করেন একজন সদস্য। তখন বৈঠকে উপস্থিতি একাধিক সদস্য বলেন, এত বড় বাজেট কীভাবে পাস হবে, কীভাবে বাস্তবায়ন হবে।
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মতোই গণতানুগতিক বাজেট দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু সেই ধারা থেকে বের হয়ে বাজেট চমক রাখার সুযোগ ছিল। রাজস্ব আয়ের সঙ্গে মিলে রেখেই বাজেট প্রণয়ন করা উচিত ছিল সরকারের। এবারের বাজেটে সরকার দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্যেও কোনো রকম উল্লেখযোগ্য দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম হয়নি।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে আসন্ন কোরবানি ঈদে সারা দেশে নিরাপত্তা প্রসঙ্গ তোলেন একজন সদস্য। তখন দুইজন সদস্য আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, এবারের ঈদে নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। কারণ দেশে ও বিদেশে বসে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসররা দেশবাসীর ঈদ উদ্যাপন ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র করতে পারে। তাই নির্বাচনি আসনে গেলেও নেতা-কর্মীদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি জনগণের কাছেও ৩১ দফা রূপরেখা নিয়ে যেতে হবে।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ভার্চুয়ালি), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম