রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ম্যানুয়ালি ভোট গণনা চায় ছাত্রদল। তবে এতে একমত নয় ইসলামী ছাত্রশিবির। তারা ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা চায়। এদিকে ভোটের আগেই পোষ্য কোটার দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতির আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। এতে নির্বাচন নিয়ে ফের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সুযোগ নেই। তবে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করি, নির্বাচনের আগেই এর সমাধান হবে।’ অপরদিকে রাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ১০ জন সাবেক সমন্বয়ক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাবির সবশেষ গঠিত ১৭ জনের সমন্বয়ক কমিটি ছিল। সাবেক ১৭ সমন্বয়কের মধ্যে ১০ জন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জন রাকসুতে ও একজন হল সংসদে নির্বাচন করছেন। ১০ জনের মধ্যে একজন স্বতন্ত্রভাবে, আর বাকি ৯ জনই পাঁচটি প্যানেলে যুক্ত হয়ে নির্বাচন করছেন। নির্বাচন করতে যাওয়া ১০ সাবেক সমন্বয়কের মধ্যে একজন নারীও আছেন। গতকাল দুপুরে নির্বাচন কমিশনে ম্যানুয়ালি ভোট গণনাসহ ছয় দফা দাবি জানায় ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম।’ এ প্যানেলের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা রক্ষার্থে ‘স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স’ ব্যবহার নিশ্চিত করা; ভুয়া ও জাল ভোট শনাক্তের জন্য বাধ্যতামূলক ‘ছবিযুক্ত ভোটার’ তালিকা প্রদান ইত্যাদি। এ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। বর্জন করতে চাই না। তবে নির্বাচন কমিশনের গাছাড়া ভাব। আমি বলতে চাই আপনারা আরও একটু সোচ্চার হোন। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অবিলম্বে দাবিগুলো মেনে নেন।’
একই দিন বিকালে ওএমআর মেশিনে ভোট গণনাসহ ৯ দফা প্রস্তাব দেয় শিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। এ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী ও শাখা শিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রদলের ম্যানুয়ালি (হাতে) ভোট গণনা দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। এ পদ্ধতিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল ঘোষণায় তিন দিন লেগেছে। এখানে ভোটার আরও বেশি। ফলে সপ্তাহের বেশি সময় লাগতে পারে। ভোটের পরদিন ফলাফল প্রকাশ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে না।’ শিবির সমর্থিত প্যানেলের অন্য প্রস্তাবের মধ্যে আছে কোনো প্রার্থী প্রযুক্তিগত সমস্যা নিয়ে আপত্তি করলে ম্যানুয়ালি ভোট গণনার ব্যবস্থা রাখা, সাংবাদিকদের পৃথক আইডি কার্ডের ব্যবস্থা রাখা ইত্যাদি।
এদিকে রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে এ পর্যন্ত ১০টি প্যানেল আত্মপ্রকাশ করেছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্যানেলে সাবেক সমন্বয়করা আছেন। ৭ সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন প্যানেলের ঘোষণা আসতে শুরু করে। ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী হন সাবেক সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা। ৮ সেপ্টেম্বর ঘোষিত হয় আরেকটি প্যানেল ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’। এখানে সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী মারুফ ভিপি প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি। ৯ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ ঘটা ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়বেন সাবেক সমন্বয়ক ফুয়াদ রাতুল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক। তিনজন সাবেক সমন্বয়কের উদ্যোগে ১০ সেপ্টেম্বর ঘোষিত হয় ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেল। এ প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী হয়েছেন মেহেদী সজীব, জিএস সালাউদ্দিন আম্মার ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে আকিল বিন তালেব। ১১ সেপ্টেম্বর ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে আরেকটি প্যানেলের আত্মপ্রকাশ হয়। এতে সাবেক দুই সমন্বয়ক আছেন। ভিপি প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সমন্বয়ক তাসিন খান। এ প্যানেল থেকে এজিএস প্রার্থী মাহাইর ইসলাম। মো. আতাউল্লাহ নামে সাবেক সমন্বয়ক পরিবেশ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। আরেক সাবেক সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম শহিদ নবাব আবদুল লতিফ হল সংসদে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘নবাবীয়ান ঐক্যজোট’ প্যানেল থেকে জিএস পদে নির্বাচন করছেন। ছাত্রত্ব না থাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না, গোলাম কিবরিয়া মো. মিশকাত চৌধুরী, মাসুদ রানা, মো. নওসাজ্জামান ও তানভীর আহমেদ রিদম।