উজানের ঢল ও টানা ভারী বৃষ্টিপাতে উত্তরের তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী পাঁচ দিন দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি এবং পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের শঙ্কাও রয়েছে।
গতকাল সর্বশেষ আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ মঙ্গলবার আট বিভাগের বেশির ভাগ এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি এবং কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। তাপমাত্রায় তেমন পরিবর্তন হবে না। বুধবার রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং অন্যান্য বিভাগে কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এদিন রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেটে কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। তবে সারা দেশে তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার ১৮ সেপ্টেম্বর রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেটে বৃষ্টি বেশি হতে পারে। ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগে কিছু জায়গায় বৃষ্টি চলবে। ভারী বর্ষণের শঙ্কা রয়েছে মূলত উত্তরাঞ্চল ও সিলেটে। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেটের কিছু কিছু জায়গায় এবং অন্যান্য বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর-
লালমনিরহাট : তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে লালমনিরহাটসহ আশপাশের জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল সকাল ৬টার পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ৫২.১৮ মিটার, যা বিপৎসীমা (৫২.১৫ মিটার) থেকে ৩ সেন্টিমিটার ওপরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ উত্তরের বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এবং বিপৎসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। তিস্তাপাড়ের গোবর্দ্ধন গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন জানান, গতকাল সকাল থেকেই নদীর পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করে, ফলে চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে এবং মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, তিস্তার পানি হুহু করে বাড়ছে। আমাদের জীবনযাপন এখন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের দিনমজুর এনামুল কবির বলেন, নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পশুপাখি, শিশু, বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। আমাদের বাড়িতেও পানি ঢুকেছে, কিন্তু এখনো কেউ খোঁজখবর নেয়নি। তাই আমরা দ্রুত প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মানুষের কষ্ট লাঘবে জরুরি ত্রাণ সহায়তা দরকার।
তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টের পানির লেভেল পরিমাপক নুরুল ইসলাম বলেন, উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে আপাতত বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।
কুড়িগ্রাম : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা বর্ষণে কুড়িগ্রামের তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদসহ সবকটি নদনদীর পানি ক্রমেই বাড়ছে। দুই দিন ধরে এসব নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় সৃষ্টি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি। এ ছাড়া বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি। তবে তিস্তার পানি বিপৎসীমার অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে। যে কোনো মুহূর্তে তা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান গতকাল বিকালে জানান, ২৪ ঘণ্টায় সবকটি নদনদীর পানি আরও বাড়লেও তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার মাত্র ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে দুধকুমার নদের পানিও ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এসব নদনদীর পানি আরও বাড়বে।
সিলেট : উজানে ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত ও গত কয়েকদিন ধরে সিলেটে টানা বৃষ্টির কারণে নদনদীর পানি বাড়ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ‘আকস্মিক বন্যায়’ সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কার পূর্বাভাস দিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সূত্র জানায়, গেল কয়েক দিন ধরে উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম ও ত্রিপুরার পাহাড়ি এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারাসহ সবকটি নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাউবো সূত্র জানায়, রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ৫৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। কুশিয়ারার পানি আমলশীদে ৮৭ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৮৪ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ১৫ সেন্টিমিটার, শেরপুরে ১৩ সেন্টিমিটার, লোভা নদীর পানি ৯২ সেন্টিমিটার, সারি নদীর পানি ৬১ সেন্টিমিটার, ডাউকি নদীর পানি জাফলংয়ে ৪০ সেন্টিমিটার, সারিগোয়াইন নদীর পানি ৩৬ সেন্টিমিটার ও ধলাই নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
রংপুর : উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ছুঁই ছুঁই করছে। নদী পানিতে টইটম্বুর হওয়ায় যে কোনো সময় নদীর নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে নদীর তীরবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৯টায় তিস্তানদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। একই সময় তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। উজানের ঢল কমে যাওয়ায় ডালিয়া পয়েন্টে দিনভর ১০ সেন্টিমিটার কমে বিকাল ৩টায় এ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে তিস্তা নদীর ভাটি অঞ্চল কাউনিয়ায় পানি বেড়েছে। দিনভর ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিকাল ৩টায় এ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
সারা দেশে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস : সারা দেশে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর ফলে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমানের দেওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ সকাল ৯টার মধ্যে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পার। এ ছাড়া সারা দেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।