বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বীর বিক্রম বলেছেন, ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু দেশের জনগণের এই সনদের কোনো প্রয়োজন নেই। এটি কেবল কিছু উপদেষ্টা ও ব্যক্তির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম আয়োজিত “স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য” শীর্ষক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
হাফিজ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৭ বছর লুটপাট করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এরপর প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। মুক্তিযোদ্ধারা যে দেশ সৃষ্টি করেছেন, সেই মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি আজও উপেক্ষিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জানে—১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেছিলেন ছাত্র, যুবক ও সাধারণ মানুষ; কোনো রাজনৈতিক দল নয়। মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই।
বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করছে। কারণ, সরকারের প্রভাবশালী অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি, বরং কেউ কেউ যুদ্ধের বিরুদ্ধেও ছিলেন। তাই তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চায়।
হাফিজ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ ছিল নয় মাসব্যাপী এক মহাকাব্যিক সংগ্রাম। এর সঙ্গে আগস্টের অভ্যুত্থান বা এরশাদবিরোধী আন্দোলনের কোনো তুলনা চলে না। কারণ মুক্তিযুদ্ধ একটি নতুন দেশ সৃষ্টি করেছে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “কেউ যদি রাজাকারদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করে বা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে দিতে চায়, তাহলে আমরা তা প্রতিরোধ করব।”
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি বলা হয়েছিল, সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে প্রণয়ন হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিএনপির দেওয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দিয়েই চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।”
হাফিজ বলেন, বিএনপি বাধ্য হয়েই সনদে সমর্থন দিয়েছে। তবে দলটির দাবি—যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, শুধু সেগুলোই সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের প্রয়োজন কোনো সনদ নয়, প্রয়োজন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, যেখানে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নিজের হাতে বেছে নিতে পারবে।”
ভারত প্রসঙ্গে হাফিজ বলেন, “আমাদের কিছু প্রতিবেশী রাষ্ট্র চায় না বাংলাদেশ স্বাধীনভাবে মাথা তুলে দাঁড়াক। শেখ হাসিনাকে তারা আশ্রয় দিয়েছে। আমি তাকে বলব—শুধু কলকাতায় নয়, ভারতের প্রতিটি প্রদেশে অফিস খুলুন, ভারতের রাজনীতিতে যোগ দিন; বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে দূরে থাকুন।”
তিনি আহ্বান জানান, “যারা একসঙ্গে সংগ্রাম করেছেন, তারা যেন ঐক্য বজায় রাখেন। ক্ষমতার লোভে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন না দেন।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
বিডি প্রতিদিন/আশিক