আরও ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরিয়ে তাদের ফেরত পাঠায় দেশটি। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বহনকারী ভাড়া করা বিশেষ বিমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। রানওয়ে পর্যন্ত শিকল পরিয়েই আনা হয়। রানওয়ে থেকে শিকল খুলে অ্যারাইভাল গেটে আনা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গত কয়েক মাসে অন্তত ১৮০ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর তথ্য জানা গেছে।
বিমানবন্দরে প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তারা জানান, রাত ১১টার পরপর বিমানটি নামলেও ৩ ঘণ্টা সেটি রানওয়েতে ছিল। এ ৩ ঘণ্টায় তাদের হাতকড়া ও শিকল খোলা হয়। বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল এরিয়াতে পৌঁছানোর আগেই সবাইকে শিকলমুক্ত করে দেওয়া হয়। পরে রাত ২টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের বিমানবন্দরে আনা হয়। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ টিম, কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ টিম এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের পক্ষ থেকে তাদের বাড়ি পৌঁছানোর জন্য অর্থসহায়তা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
ফেরত আসা ব্যক্তিরা জানান, প্রায় ৬০ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রায় তাদের হাতকড়া ও শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছিল। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যন্ত্রণা নিয়ে বসে থাকতে হয়েছে। খেতে দেওয়া হয়েছে শুধু রুটি আর পানি। এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও একজন অফিসার নিয়ে যেতেন, আবার শিকলে বেঁধে দিতেন। নোয়াখালীর ২২ বছর বয়সি আবদুল্লাহ বিমানবন্দরে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এ লম্বা যাত্রায় পুরোটা সময় হাতে-পায়ে আসামিদের মতো শিকল পরিয়ে রেখেছিল। একে তো দেশে ফেরত আসার হতাশা, তার ওপরে টেররিস্টের মতো হাতে-পায়ে শিকল পরিয়ে মাতৃভূমিতে আসার ভয়াবহ পরিস্থিতি আর কারও না হোক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দীর্ঘ যাত্রা ও শিকল পরে থাকায় আগতরা ছিলেন বিধ্বস্ত। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় কয়েক দফায় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। প্রথম দিকে হাতকড়া ও শিকল না পরানো হলেও ২ আগস্ট একটি সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজ সি-১৭ করে এক নারীসহ ৩৯ বাংলাদেশিকে দেশে পাঠানো হয়। তাদের সবার হাতকড়া ও শিকল ছিল। বৃহস্পতিবারও সবার হাতে হাতকড়া ও শিকল ছিল।
মালয়েশিয়ায় আটক ৩৪ বাংলাদেশিসহ ৯৪ অভিবাসী : মালয়েশিয়ার জোহর রাজ্যে অভিযান চালিয়ে ৩৪ বাংলাদেশিসহ ৯৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। গত বুধবার জোহর বাহরু ইমিগ্রেশন বিভাগ এ অভিযান চালায়। গতকাল জোহর ইমিগ্রেশনের পরিচালক মোহাম্মদ রুসদি মোহাম্মদ দারুস স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ইস্কান্দার পুতেরি ও কুলাই এলাকার ৪৩টি বিভিন্ন স্থানে একযোগে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে মোট ১৯৯ জনকে তল্লাশি করা হয়। তাদের মধ্যে ৯৪ জনকে আটক করা হয়। মোহাম্মদ রুসদি মোহাম্মদ দারুস বলেন, আটককৃতদের মধ্যে ১৮ থেকে ৬১ বছর বয়সি ৩৮ জন বাংলাদেশি, ১৫ জন ইন্দোনেশিয়ান, ১২ জন মিয়ানমারের, ছয়জন পাকিস্তানি, চারজন ভারতীয়, দুজন ভিয়েতনামি, একজন নেপালি এবং একজন থাই পুরুষ রয়েছেন। এ ছাড়া ১০ জন মিয়ানমারের নারী এবং পাঁচজন ইন্দোনেশিয়ান নারীও আটক হয়েছেন। এ অভিযানে এনফোর্সমেন্ট ডিভিশন অ্যাকশন ইউনিট এবং মালয়েশিয়ান বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রোটেকশন এজেন্সির কর্মকর্তারা অংশ নেন।