নানান কৌশলে মৎস্য অধিদপ্তরের ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্পে অর্থ লুট করা হয়েছে। গাড়ি মেরামতের নামে আত্মসাৎ করা হয়েছে সরকারি টাকা। এক গাড়ি দিনে আটবার মেরামত দেখিয়ে ভুয়া বিল-ভাউচার করা হয়েছে। অর্থ আত্মসাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে ১৪টি গাড়ি। এর মধ্যে তিনটি পাঁচ মাসে ৮০ বার মেরামত দেখানো হয়েছে।
জানা যায়, প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা প্রকল্পের অর্থ লুট করতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের দাপট দেখিয়েছেন। প্রকল্পের তালিকার বাইরে ব্যবহার করা হয় ১৪টি গাড়ি। ভুয়া বিল-ভাউচার বানিয়ে এসব গাড়ির মেরামত ও জ্বালানি বাবদ প্রায় ৩১ লাখ ২৭ হাজার টাকা লুট করা হয়। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে গাড়িগুলোর মেরামত বাবদ খরচ দেখানো হয় ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০, জ্বালানি হিসেবে এলপিজি বাবদ ৫ লাখ ২৮ হাজার ও অকটেন এবং অন্যান্য জ্বালানিসামগ্রী বাবদ ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এসব জ্বালানি সরবরাহকারী হিসেবে যমুনা অটো সেন্টার নামক একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা হয়। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়) হাতে নেয় বিগত সরকার; যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৫৪২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মূল লক্ষ্য ছিল সরকারি ও বেসরকারিভাবে মাছের ডিম উৎপাদন, খামারে মানসম্পন্ন ব্রুড মাছ ও পোনা মাছ উৎপাদন এবং উন্নত কৌলিতাত্ত্বিক গুণসম্পন্ন কার্প ও দেশি ছোট প্রজাতির ব্রুড স্টক তৈরির মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের ২৩ জেলার ২৭টি সরকারি মৎস্য ডিম উৎপাদন খামারকে প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। কেনা হয় গাড়ি, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।
এক গাড়ি দিনে আটবার মেরামত : প্রকল্পসংশ্লিষ্ট নথি, বিল-ভাউচার, গাড়ির তালিকা যাচাইয়ে দেখা যায়, ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-৩৫৬০ নম্বরের গাড়ি দিনে তিন থেকে সাতবার মেরামত দেখানো হয়েছে। ২০১৯ সালের আগস্টেই নয়বার মেরামত করা হয়েছে একটি গাড়ি। এক দিনে (৭ আগস্ট) মাসুম অটোস, মামুন অটোস পার্টস, ঐতিহ্য মোটরস, প্রগতি মোটর ওয়ার্কশপ ও জাকিয়া ট্রেডার্সে মেরামত করা হয় একই গাড়ি। ১৮ সেপ্টেম্বর এক দিনেই মামুন অটোস পার্টস, ঐতিহ্য মোটরসে দুবার, প্রগতি মোটর ওয়ার্কশপে দুবার, হাশেম কার ডেকোরেশন ও আলিফ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে মেরামত করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৭ নভেম্বরে একই দিনে পাঁচবার, ১৫ অক্টোবর এক দিনেই তিনবার, ৩ ডিসেম্বর এক দিনেই পাঁচবার মেরামত করা হয়েছে এক গাড়ি।
এ ছাড়া ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-৩৪৩৭ নম্বরের গাড়ি ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর আটবারসহ ঠিকানাহীন আরও আটবার মেরামত দেখানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্পের তিনটি গাড়ি আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৮০ বার মেরামত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ব্রুড ব্যাংক প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. সিরাজুর রহমানকে একাধিকবার কল করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রকল্পটির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। অফিসিয়াল তথ্য মহাপরিচালক ভালো দিতে পারবেন।’ তবে অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।