ফ্রান্সের নিস শহরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলনে সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় শক্ত অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং টেকসই সামুদ্রিক অর্থনীতি গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ দুটি নতুন স্বেচ্ছাধীন অঙ্গীকার ঘোষণা করে। এ সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে দেশের উপকূলীয় দুর্যোগ, সমুদ্রদূষণ এবং ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ থেকে আসা দুই সদস্যের প্রতিনিধিদলটি। তারা উল্লেখ করেছে, বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক ব্লু ইকোনমি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাময় খাত হলেও তা বর্তমানে বৈশ্বিক জলবায়ুসংকট ও সমুদ্রদূষণের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে। প্রতিনিধিদলের প্রধান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল হাসান উচ্চপর্যায়ের এক সেশনে বলেন, বাংলাদেশ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্বাক্ষরিত এবং ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে অনুমোদিত ‘জাতীয় আইনগত এখতিয়ারের বাইরের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারের ওপর আন্তর্জাতিক চুক্তি’ অনুমোদন করেছে। এর মাধ্যমে আমরা জাতীয় সীমার বাইরে সামুদ্রিক জৈববৈচিত্র্য রক্ষার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। বাংলাদেশ এই চুক্তির অনুমোদন এবং এর দায়বদ্ধতা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এ চুক্তি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, এসডিজি ১৪-এর বৃহত্তর লক্ষ্যসমূহকে সম্পূরক করবে।’
তিন প্রস্তাব : তিনটি বিষয় জোর দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাগরের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে জাতিসংঘের কনভেনশন অন দ্য ল অফ দ্য সি-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সামুদ্রিক বিজ্ঞান, তথ্য আদান-প্রদান এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরে উন্নত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কার্যকর সমুদ্রভিত্তিক সমাধানের জন্য অপরিহার্য।
তৃতীয়ত, উন্নয়নশীল দেশগুলো যে ধারাবাহিক সক্ষমতা ও জ্ঞানের ঘাটতির সম্মুখীন, তা দূর করা জরুরি। এজন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের কনভেনশন অন দ্য ল অফ দ্য সি-এর ধারা ১৪-এর অর্থবহ বাস্তবায়ন এবং সামুদ্রিক প্রযুক্তিতে ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকারের জন্য জরুরি বিনিয়োগ আহ্বান করছে।
দুটি নতুন অঙ্গীকার : প্রথমত, বাংলাদেশ তার এখতিয়ারের আওতাভুক্ত অঞ্চলে বৈজ্ঞানিক মূল্যায়নের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশব্যবস্থা চিহ্নিত করে সেগুলোর কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা সম্প্রসারণে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
দ্বিতীয়ত, বিবিএনজে চুক্তি অনুমোদনের পর বাংলাদেশ এর বাস্তবায়নের প্রস্তুতি জোরদার করবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ বাধ্যতামূলক চুক্তির ব্যাপক অনুমোদন উৎসাহিত করবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ একটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়ায় সমুদ্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় আন্তদেশীয় সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে।
বিভিন্ন দেশের সমুদ্র, পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রতলদেশের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। নিস কনফারেন্সে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। যা বিশ্বের সব দেশের পারস্পরিক ও আন্তর্জাতিক সহায়তার দরজা খুলছে।
ফ্রান্স ও কোস্টারিকার যৌথ আয়োজনে জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলন ২০২৫-এ বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে, সমুদ্রসম্পদ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সচেতন ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সম্মেলন শেষে আশা করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সহায়তা, গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।