দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) নারী পুরুষ ও শিশুদের বলপ্রয়োগে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি এবং স্থানীয় জনতার প্রতিরোধের মুখে লালমনিরহাটে বিএসএফ ব্যর্থ হলেও সিলেট সীমান্তে তারা সফল হয়েছে। লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৫৮ জন ভারতীয় নাগরিককে অবৈধভাবে বাংলাদেশে পুশইনের চেষ্টা করে বিএসএফ। মঙ্গলবার ভোর রাতে জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে তাদের পুশইনের চেষ্টা করা হয়।
বিজিবি ও সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন জানায়, হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের পূর্ব আমঝোল সীমান্তে ৯০৭ নম্বর সীমান্ত পিলারের ৪ নম্বর সাব পিলার দিয়ে বুধবার ভোরে ৯ জন ও ওই উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সীমান্ত দিয়ে ১৬ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বিএসএফ। একই সময় আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে ও পাটগ্রাম উপজেলার দুই সীমান্ত দিয়ে ২০ জনকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বিএসএফ।
পুশইন করা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সবাই জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক। তাদের ভারতের আসাম থেকে কয়েক দিন আগে আটক করে ভারতীয় পুলিশ। আটক হওয়া ভারতীয় ৫৮ জন নাগরিক বর্তমানে সীমান্তে শূন্যরেখায় অবস্থান করছেন। তাদের ঘিরে রেখেছে বিজিবি ও বিএসএফ।
লালমনিরহাট বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী ঈমাম জানান, বিএসএফ পুশইনে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব লোকজন এখন সীমান্তের শূন্য রেখায় রয়েছে। এ নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে কথা চলছে। দফায় দফায় পতাকা বৈঠক হচ্ছে। পুশইনের শিকার লোকজন ভোর থেকে অবস্থান করছে ভারতীয় অংশের খোলা আকাশের নিচে। বিভিন্ন সীমান্তে পুশইন ঠেকাতে বিজিবির পাশাপাশি স্থানীয় গ্রামবাসীরাও অবস্থান নিয়েছে। কাঁটাতারের বেড়ার গেট খুলে এপারে পাঠানো লোকজন ভারতের আসামের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। বিজিবির রংপুর সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল সাব্বির আহম্মেদ বলেন, শূন্য লাইনের মধ্যে বিভিন্ন পয়েন্টে বিএসএফ কিছু লোকজনকে পুশইন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। শুরু থেকেই বিজিবি দিনে ও রাতে টহল জোরদার করে এবং স্থানীয়দের সহায়তায় পুশইনের চেষ্টা ব্যর্থ করেছে। সেখানে টহল জোরদারের পাশাপাশি পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে। সিলেট থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সিলেট সীমান্ত দিয়ে বিএসএফের পুশইন থামছেই না। সুযোগ পেলেই তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে পাঠাচ্ছে অনুপ্রবেশকারীদের। গত দুই সপ্তাহে সিলেট জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রায় ১৫০ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের আগ্রাসি তৎপরতা ঠেকাতে সীমান্তজুড়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে বিজিবি। নেওয়া হয়েছে চার স্তরের ব্যবস্থা। বিজিবির সঙ্গে সীমান্ত পাহারায় নেমেছেন সাধারণ মানুষও। এরপরও নানা কৌশলে পুশইন অব্যাহত রেখেছে বিএসএফ। মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন তিনটি স্থান দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে ৬৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ।
বিএসএফের পুশইন ইস্যুতে বিজিবির উদ্বেগ : চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিএসএফের অবৈধভাবে পুশইন করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিজিবি। গতকাল সীমান্তের ৭৬ নম্বর মেইন পিলারের কাছে দুপুর ১২টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে চুয়াডাঙ্গার ৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হাসান ও ভারতের পক্ষে ৩২ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ড্যান্ট শ্রী সুজিত কুমার নেতৃত্ব দেন।
নাজমুল হাসান জানান, সম্প্রতি সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে অভিবাসন হিসেবে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের অবৈধভাবে বাংলাদেশে পুশইন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিএসএফের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে কোনো নাগরিককে পুশইন করা যেমন সীমান্ত আইন লঙ্ঘন তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে যাতে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পুশইনের মতো ঘটনা না ঘটে সেজন্য পদক্ষেপ নিতে বিএসএফ কমান্ড্যান্টকে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিষয়ের সঙ্গে বিএসএফ কমান্ড্যান্ট একমত হন এবং লোকাল কমান্ডারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার আশ্বাস দেন।