চলতি এপ্রিলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে দেশব্যাপী লোডশেডিং বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। কারিগরি ত্রুটির কারণে আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। এতে লোডশেডিং কিছুটা বাড়তে পারে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানও গত শনিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোজায় যেমন বলেছিলাম লোডশেডিং হবে না, কিন্তু গ্রীষ্মে সে ব্যাপারে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারব না’।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি পিএলসির তথ্যানুযায়ী, গত শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত দেশে ৪২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়। এদিন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদন হয় ১৩ হাজার ৫৫২ মেগাওয়াট। গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত দেশে লোডশেডিং হয় ১০০ মেগাওয়াটের। এদিন চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের আর উৎপাদন হয় ১৩ হাজার ৬২৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবেই দেশে লোডশেডিং বাড়বে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস বলছে, এবার গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে গ্রীষ্মে এবার দেড় থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং হতে পারে। বিশেষ করে অর্থসংকটে জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা আছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বকেয়া বিল নিয়েও আছে কিছুটা দুশ্চিন্তা।
এর আগে কারিগরি ত্রুটির কারণে ভারতের ঝাড়খ রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে। এর প্রথম ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয় গত ৮ এপ্রিল। আর দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয় গত ১১ এপ্রিল শুক্রবার দিবাগত রাতে। এতে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়। যদিও ১২ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রথম ইউনিটটি আবার চালু হয়।
বিগত বছরগুলোতে এপ্রিল মাসে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় লোডশেডিংয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এবার এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো হলেও আবহাওয়ার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকরা।
বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সভাপতি কে এম রেজাউল হাসনাত বলেন, আমাদের এখন সরকারের কাছে ৫ মাসের বিল বাকি। আগের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এখন সরকার আমাদের থেকে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিচ্ছে। অন্য বছর এ সময় আরও বেশি বিদ্যুৎ নিত সরকার। তাপমাত্রা বাড়লে হয়তো আরও বেশি বিদ্যুৎ সরকারকে নিতে হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গতকাল বলেন, আগে শহরের মানুষকে খুশি রাখার জন্য গ্রামে বৈষম্যমূলকভাবে বেশি লোডশেডিং দেওয়া হতো। এখন যদি লোডশেডিং দিতেই হয় তাহলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া হবে। ডিপিডিসি, ডেসকোর মতো শহরের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সমানভাবে বিদ্যুৎ দেব। এ ক্ষেত্রে কমাতে হলে শহরভিত্তিক কোম্পানিগুলোর বিদ্যুৎ বরাদ্দ আগে কমাব। এবার গরমে লোডশেডিং যাতে কম হয় তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র সচেতনভাবে ব্যবহার করা এবং আলোকসজ্জা না করার মতো বিষয়গুলোকে আমরা জোর দিচ্ছি। আমরা মোটামুটিভাবে জ্বালানির ব্যবস্থা করছি। বকেয়া অনেকটাই পরিশোধ করেছি। তবে রোজায় যেমন বলেছিলাম লোডশেডিং হবে না, কিন্তু এবার গ্রীষ্মে সে ব্যাপারে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারব না।’