পুরাতন বছরের জরাজীর্ণতা ও গ্লানি মুছে দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করার অপেক্ষায় গোটা জাতি। এসো হে বৈশাখ এসো এসো রবীন্দ্রনাথের চিরায়ত এই গানের সঙ্গে পান্তা, ইলিশ, মুড়ি, মুড়কির আপ্যায়নে বাঙালির মাঝে বইবে প্রাণের উচ্ছ্বাস। বৈশাখ বরণে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে থাকবে ভালোলাগার উন্মাদনা। এর আগের দিন চৈত্রসংক্রান্তির মধ্য দিয়ে পুরাতন বছর ১৪৩১-কে বিদায় জানিয়ে বঙ্গাব্দ ১৪৩২-কে বরণ করে নেবে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরা।
এবার যৌথ আয়োজনে চৈত্রসংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলা ব্যান্ড মিউজিশিয়ানস। এর মধ্যে চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে ১৩ এপ্রিল রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে ‘ব্যান্ড শো’, পরের দিন সোমবার পয়লা বৈশাখের সকালে বের করা হবে বর্ণাঢ্য ‘শোভাযাত্রা’, বিকালে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আয়োজন করা হবে ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ এবং ‘ড্রোন শো’। পয়লা বৈশাখের পরের দিন ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আয়োজন করা হবে ‘বৈশাখী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’। এ বছর পয়লা বৈশাখের শোভাযাত্রায় প্রথমবারের মতো বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীসহ প্রায় দুই শতাধিক ব্যান্ড মিউজিশিয়ানস অংশগ্রহণ করবে। ব্যান্ড মিউজিশিয়ানরা পৃথিবীর শান্তি কামনায়- বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের জন্য সকল শিল্পীরা সম্মিলিতভাবে একটি গান গাইবে। এই শোভাযাত্রায় ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশের সব মিউজিশিয়ানদেরও অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকাল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। আয়োজনে বিস্তারিত তুলে ধরেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন (উপসচিব), বাংলা ব্যান্ড মিউজিশিয়ানসের পক্ষ থেকে ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সদস্য শেখ মনিরুল আলম টিপু, বিভিন্ন ব্যান্ড দলের প্রতিনিধিরা এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তারা।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য আলোচিত হওয়া বা না হওয়া নয়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো জাতির অন্তরে যে গভীর ক্ষত হয়েছে, যা সাংস্কৃতিক বিভাজন এবং ফ্যাসিবাদের ফল, তা উতরানো। ৫৪ বছরের ইতিহাসে শিল্পকলা একাডেমিতে চাঁদরাতে কোনো অনুষ্ঠান হয়নি, এবার হয়েছে। আগামী বছর সারা দেশে সবগুলো শিল্পকলায় এই অনুষ্ঠান হবে। আবার চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে এরপূর্বে ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, সেটা এবার করা হয়েছে। কারণ উৎসবটা বাংলাদেশের, তাই সবার অন্তর্ভুক্তি থাকতে হবে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি কী, আপনি অন্যের জন্য কী অনুভব করেন এটা কিন্তু বলে দেয় আপনার সংস্কৃতিটা কী। আমরা যে ওদের কথা অনুভব করছি এটা কিন্তু বলে দেয় আমাদের সংস্কৃতিটা কী। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনে যা হচ্ছে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমরা যদি নববর্ষে শুধু আমাদের দেশের জন্য শুভকামনা করি এরচেয়ে স্বার্থপর আর কিছু হতে পারে না। ফলে এই নববর্ষে আমাদেরকে ফিলিস্তিনে যে ঘটনা ঘটছে তার প্রতিবাদ করে ফিলিস্তিনিদের যেন শান্তি ফিরে আসে এই কামনাটা আমাদের করতে হবে। তাহলেই বোঝা যাবে আমরা এদের জন্য ভাবছি। এর মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতিটা কী তা বোঝা যাবে।