যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসন্ন সপ্তাহগুলোতে বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে শুল্ক বৃদ্ধি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মতবিরোধের পর এই পদক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, তার প্রশাসন ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাধা দূর করতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন দুই দেশের মধ্যে একটি সফল বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে কোনো অসুবিধা হবে না। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর বুধবার মোদিও একই ধরনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মোদি তার পোস্টে বলেন, ওয়াশিংটন এবং নয়াদিল্লি ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং স্বাভাবিক অংশীদার। তিনি জানান, উভয় দেশের দলগুলো দ্রুত বাণিজ্য আলোচনা শেষ করতে কাজ করছে এবং তিনিও ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার জন্য উন্মুখ। এই ইতিবাচক খবর প্রকাশের পর ভারতের শেয়ার বাজার ০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক জোরদার হয়েছিল। তবে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ট্রাম্প প্রশাসন হঠাৎ করে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে দেয়, যা দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিয়তায় ফেলে।
এছাড়াও, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ট্রাম্প এবং তার শীর্ষ কর্মকর্তারা ভারতের বিরুদ্ধে রাশিয়া থেকে তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়নের অভিযোগ তোলেন। যদিও নয়াদিল্লি এ দাবি অস্বীকার করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই টানাপোড়েনের মধ্যেই ভারত চীন ও রাশিয়ার দিকে ঝুঁকেছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত মাসে মোদি সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীন সফর করেন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা দেখা যায়। এই ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের অবস্থান নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে।
তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, এখনই দ্রুত কোনো চুক্তির আশা করা উচিত নয়। এমকে গ্লোবালের অর্থনীতিবিদ মাধবী অরোরা বলেন, ট্রাম্পের ক্ষেত্রে একটি চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার জন্য আমাদের আরও সুনির্দিষ্ট সংকেতের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
সিএনবিসি-টিভি১৮-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কর্মকর্তারা সেপ্টেম্বরে সরাসরি বৈঠক করে আলোচনা পুনরায় শুরু করার পরিকল্পনা করছেন। গত মাসে নির্ধারিত বৈঠকটি স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর এটি একটি নতুন উদ্যোগ।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১২৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪৫.৮ বিলিয়ন ডলার। এই নতুন আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশই বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পাশাপাশি সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র: রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল