ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার গাজা সিটি দখলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা এই ‘বিপজ্জনক’ পরিকল্পনাকে আন্তর্জাতিক আইনের বড় লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে কঠোর নিন্দা জানান।
রাশিয়ার জাতিসংঘ স্থায়ী প্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেন, ইসরায়েল এক বেপরোয়া পরিকল্পনার মাধ্যমে সংঘাতের তীব্রতা বাড়াতে চাইছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় হামাসের কাছ থেকে ১৪০ জনের বেশি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হলেও এখন ইসরায়েল আরও সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল। পলিয়ানস্কি প্রশ্ন করেন, এই অমানবিক হত্যাযজ্ঞ থামানোর আগে আরও কত ফিলিস্তিনির প্রাণ যেতে হবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওপরও গাজায় ইসরায়েলকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত ফু বলেন, গাজার বর্তমান পরিস্থিতি বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে গাজা দখলের যেকোনো প্রচেষ্টা রুখে দিতে এবং নতুন ইসরায়েলি অভিযান নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান। তিনি সামরিক পন্থাকে সংকট সমাধানের পথ হিসেবে অগ্রাহ্য করেন এবং গাজায় ত্রাণ প্রবেশের জন্য সব দ্বার খুলে দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়ার মতো দেশগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে পরিকল্পনা বাতিলের আহ্বান জানায়। এছাড়া স্পেন, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, নরওয়ে, পর্তুগাল ও স্লোভেনিয়াও আলাদা বিবৃতিতে গাজা সিটি দখলের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
অন্যদিকে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানান, যুক্তরাষ্ট্র জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজা অঞ্চলের জন্য শান্তির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু বর্তমান জরুরি বৈঠক সেই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে। তিনি বলেন, ইসরায়েল ইতোমধ্যে তিনটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দিয়েছিল যা হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে এবং যুদ্ধ তখনই থামতে পারত যদি হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিত। মার্কিন প্রতিনিধি মন্তব্য করেন, বৈঠকে কিছু সদস্যরা ইসরায়েলকে গণহত্যার অভিযোগ দিচ্ছে যা যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে অনুচিত।
অন্যদিকে, জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেন, “ইসরায়েল ফিলিস্তিনের জনগণকে ধ্বংস করে আমাদের ভূমি দখল করে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা কি বলছে তার পরোয়া করে না ইসরায়েল, এটি অনস্বীকার্য।
এখন আমাদের কী করণীয় সেটি গুরুত্বপূর্ণ।” নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের ভাষায় যে কথা বলছে তার প্রশংসা করেন রিয়াদ। তবে তিনি বলেন, “এটিই যথেষ্ট নয়। আপনাদেরকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আপনাদেরকে এ বিষয়ে কিছু করতে হবে। এটি (গাজা দখল পরিকল্পনা) বন্ধ করতে হবে।”
ওদিকে, বৈঠকে ইসরায়েলের জাতিসংঘ প্রতিনিধি জোনাথন মিলার বলেছেন, গাজা স্থায়ীভাবে দখলে রাখার কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই।
তিনি গাজায় যুদ্ধ শেষ করার ৫ টি নীতির কথা জানান। যেগুলো এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন। এগুলো হচ্ছে: হামাসের নিরস্ত্রীকরণ, জিম্মিদের বাড়ি ফেরানো, গাজার বেসামরিকীকরণ, গাজায় বাড়তি নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, গাজায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এবং হামাসকে বাদ দিয়ে বিকল্প একটি বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম