গত জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ সামরিক হামলার পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ইরানি স্থাপনাগুলোর ওপর চালানো 'বারো দিনের যুদ্ধ' নামক এই অভিযানে দেশটির পারমাণবিক সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে বলে জানালেও গোয়েন্দা বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে—এই কর্মসূচিকে পুরোপুরি ধ্বংস করা যায়নি।
হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘ধ্বংসপ্রাপ্ত’ হয়েছে। তবে মার্কিন ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাস্তবতা এতটা সরল নয়। পেন্টাগনের মতে, ইরান তাদের কর্মসূচিকে পূর্ণ সক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে অন্তত দুই বছর সময় নিতে পারে। অন্যদিকে, এক মার্কিন গোয়েন্দা মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আবার শুরু করতে সক্ষম হবে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই প্রশ্নের চেয়ে বড় হলো—এই হামলা ইরানের কৌশলগত সিদ্ধান্তে কী পরিবর্তন আনতে পারে? বিশেষজ্ঞদের মতে, হামলার ফলে ইরান বরং পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দিকে আরও বেশি উৎসাহিত হতে পারে।
ইরান দীর্ঘদিন ধরে ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ কৌশল অবলম্বন করে এসেছে। অর্থাৎ হিজবুল্লাহ, হামাসসহ আঞ্চলিক মিত্রদের ব্যবহার করে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু ইসরায়েলি অভিযানে এসব মিত্রদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একইসাথে ইরানের নিজস্ব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে—২০২৪ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষে অধিকাংশই প্রতিহত হয়। তবে তারপরও ইরানের বড় সফলতা তাদের অনেক ক্ষেপণাস্ত্র আয়রন ডোমের মতো প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করে ইসরায়েলের নানা স্থাপনায় হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে।
এদিকে, নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে ইরানের নেতৃত্বে নিরাপত্তাহীনতার মনোবৃত্তি আরও জোরদার হয়েছে।
ইরান এতদিন ধরে মনে করত, একটি পরিপূর্ণ পারমাণবিক অস্ত্র না থাকলেও একটি ‘নিকট-প্রান্তিক’ কর্মসূচি (Near-threshold programme) তাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। কিন্তু সাম্প্রতিক হামলা ও রাজনৈতিক হুমকির মুখে সেই ধারণা এখন ভেঙে পড়েছে।
বিশেষ করে, ইসরায়েল ও মার্কিন নেতৃত্বের হুমকি এবং ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে আক্রমণের ইঙ্গিত, তেহরানকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে—পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়া এই অঞ্চলে টিকে থাকা কঠিন হতে পারে।
সামরিক হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বটে, তবে সেটা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল নয়। বরং এই পরিস্থিতি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের দিকেই ঠেলে দিতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, তেহরান কি শেষ পর্যন্ত ‘চূড়ান্ত বিকল্পে’ হাত দেবে? আর যদি দেয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল