ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, সাম্প্রতিক ১২দিনের যুদ্ধের সময় ইরানের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ইসরায়েল বাধ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শরণাপন্ন হয়েছে। বুধবার তেহরানে বিচার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, এই সংঘর্ষ প্রমাণ করেছে যে ইরান একা একাই শক্তভাবে দাঁড়াতে সক্ষম, যেখানে ইসরায়েল এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছিল যে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আমেরিকার হাত ধরতে বাধ্য হয়েছে।
আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, এটি শুধু ইরানের সামরিক শক্তির পরিচয় নয় বরং আমাদের জাতির প্রতিরোধ, সচেতনতা ও ঐক্যের জয়। এই জাতীয় আত্মবিশ্বাস ও মনোবলই ইরানের প্রকৃত শক্তি।
তিনি আরও বলেন, পহলবী শাসনামলে ইরানের নেতারা ব্যক্তিগতভাবেও আমেরিকার সমালোচনা করতে সাহস পেত না। অথচ আজ ইরান এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে সে শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় পায় না, বরং তাকে ভয় দেখাতে সক্ষম।
আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও যুদ্ধক্ষেত্রে ইরান কখনও দুর্বল অবস্থান থেকে আলোচনায় প্রবেশ করবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন। খামেনি বলেন, আমরা যুক্তি ও শক্তি—দুই দিক থেকেই পরিপূর্ণ। তাই যে কোনো ময়দানে আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রবেশ করব।
তিনি জানান, ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে বিনা উস্কানিতে আগ্রাসন শুরু করে যেখানে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করা হয়। এর এক সপ্তাহ পরে যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করে।
এর জবাবে, ইরানি সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলের বিভিন্ন কৌশলগত কেন্দ্র এবং কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি আল-উদেইদে পাল্টা হামলা চালায়।
খামেনি বলেন, ইরানের প্রতিশোধমূলক আঘাত অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ছিল। মিডিয়া সেন্সরশিপ উঠে গেলে বোঝা যাবে কী ভয়াবহ ধাক্কা তারা খেয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বড় আঘাত হানার সক্ষমতা ইরানের রয়েছে।
তিনি বলেন, শত্রুদের কৌশল ছিল ইরানকে দুর্বল করে দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা কিন্তু ইরানি জনগণের ঐক্য সেই ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেয়। তাদের পরিকল্পনা ছিল, দেশের ভেতরে এমকেও, রাজতন্ত্রী এবং অপরাধীদের সক্রিয় করে জনগণকে রাস্তায় নামানো। কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটা হয়েছে। জনগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাষ্ট্র ও বিপ্লবী ব্যবস্থা রক্ষায় এগিয়ে এসেছে।
আন্তর্জাতিক ও দেশীয় আদালতে ইসরায়েলের ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অপরাধগুলোর বিচার দাবিতে বিচার বিভাগকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান খামেনি। তিনি বলেন, এইবার আমাদের ব্যর্থ হওয়া চলবে না। বিচার পেতে যদি বিশ বছরও লাগে, তবুও অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
সূত্র: প্রেস টিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল