ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন এবং ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে এক বিশাল মানবিক যাত্রা শুরু হয়েছে। আলজেরিয়া থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রায় অন্তত ১ হাজার ৫০০ মানুষ অংশ নিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন অধিকারকর্মী ও ফিলিস্তিনের সমর্থকেরা।
তাঁদের লক্ষ্য, গাজা সীমান্তের রাফা ক্রসিংয়ে পৌঁছে ত্রাণ প্রবেশে চাপ সৃষ্টি করা। তবে এই যাত্রায় অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রায় দুই শতাধিক অধিকারকর্মীকে কায়রো থেকে আটক করা হয়েছে বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন। ইসরায়েল এই যাত্রাকে ‘জিহাদি বিক্ষোভকারী’ আখ্যা দিয়ে তাদের সীমান্তে পৌঁছানো ঠেকাতে মিশরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১০ জুন, ২০২৫) এই প্রতিবাদ যাত্রা লিবিয়ার জাবিয়া শহরে পৌঁছায়। এরপর সেখান থেকে তাঁদের মিশরের রাজধানী কায়রোয় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। আলজেরিয়া থেকে যাত্রা শুরু করে এই বিশাল সংখ্যক মানুষ তিউনিসিয়া হয়ে লিবিয়ায় প্রবেশ করেন। এরই মধ্যে তাঁরা গাড়ি ও বাসে করে লিবিয়ার ত্রিপোলি, মিসরাতা, সিরাত, ও বেনগাজি শহর পাড়ি দিয়ে মিসর সীমান্তের সালোম ক্রসিংয়ে পৌঁছেছেন। তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কায়রো থেকে গাজা সীমান্তের রাফা ক্রসিংয়ে পৌঁছানো।
১ হাজার ৫০০ জনের এই দলে আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়ার বাসিন্দারা রয়েছেন। আয়োজকেরা আশা করছেন, লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আরও অনেক মানুষ এই যাত্রায় যোগ দেবেন। যাত্রায় অংশ নেওয়া আলজেরিয়ার বাসিন্দা জামিলা শারিতাহ জানান, এই যাত্রায় তিউনিসিয়া ও লিবিয়া পূর্ণ সহযোগিতা করছে। আরেক অংশগ্রহণকারী জায়েদ আল-হামামি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, তাঁরা গাজায় খাবার প্রবেশের জন্য রাফা ক্রসিং খুলে দিতে চাপ দেবেন।
তবে এই প্রতিবাদ যাত্রার পথে একটি বড় বাধা সৃষ্টি হয়েছে। আয়োজকদের মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ জুন, ২০২৫) এএফপিকে জানিয়েছেন, যাত্রায় যোগ দিতে ইচ্ছুক দুই শতাধিক অধিকারকর্মীকে কায়রো থেকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, স্পেন, মরক্কো ও আলজেরিয়ার নাগরিকেরা রয়েছেন। তাঁদেরকে বিমানবন্দর ও হোটেল থেকে আটক করা হয়েছে বলে সাইফ আবুকেশেক জানান। এই আটকাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে এবং গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে চলমান বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এর আগে বুধবার (১১ জুন, ২০২৫) আয়োজকেরা এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, শুক্রবার (১৩ জুন, ২০২৫) গাজা অভিমুখে মূল যাত্রাটি শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। এতে অংশ নেওয়ার জন্য ৪০টিরও বেশি দেশের প্রায় চার হাজার মানুষ কায়রোগামী বিভিন্ন উড়োজাহাজের টিকিট কেটেছেন। যাত্রা শুরুর পর তাঁরা গাড়িতে করে মিসরের সিনাই উপদ্বীপের আল-আরিশ শহরে পৌঁছাবেন। সেখান থেকে ৫০ কিলোমিটার হেঁটে রাফা ক্রসিংয়ে যাবেন এবং ১৯ জুন ফিরে আসার আগপর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এই যাত্রায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ‘জিহাদি বিক্ষোভকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েল সরকার মিসরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, এই বিক্ষোভকারীদের সীমান্তে পৌঁছানো ঠেকাতে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, সীমান্তে এই ব্যক্তিদের অবস্থান ইসরায়েলি সেনাদের নিরাপত্তা বিপদের মধ্যে ফেলবে এবং এমন কোনো কর্মকাণ্ডের অনুমতি দেওয়া হবে না। ইসরায়েলের এই কঠোর অবস্থান গাজায় ত্রাণ প্রবেশ নিয়ে চলমান সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল