সৎ ব্যবসায়ীদের আরেকটি গুণ হলো, তাঁরা ক্রেতাদের যতটুকু সম্ভব সহজ শর্ত দিয়ে ব্যবসা করেন। ক্রেতাকে মানসম্মত পণ্য ক্রয় করতে সহযোগিতা করেন। লেনদেন সহজ করেন। যৌক্তিক কারণে কেউ পণ্য ফেরত দিতে চাইলে বিক্রীত মাল ফেরত নেন।
একে অপরকে ঠকানোর ব্যাপারে মহান আল্লাহকে ভয় করেন। এতে তাঁদের ব্যবসায় বরকত হয়, কারণ এ ধরনের ব্যবসায়ীর জন্য রাসুল (সা.) দোয়া করেছেন। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিক্রয়কালে উদারচিত্ত, ক্রয়কালেও উদারচিত্ত এবং পাওনা আদায়ের তাগাদায়ও উদারচিত্ত—আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি দয়া করুন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২০৩)।
নবীজি (সা.)-এর এই নির্দেশনা মেনে চললে সমাজের চেহারাই পাল্টে যেত। কেউ কাউকে ঠকাতো না। কেউ পণ্যে ভেজাল মেশাতো না। কেউ সিন্ডিকেট করে গোটা সমাজের মানুষকে বিপদে ফেলতে পারত না। আমাদের কাছে মনে হতে পারে যে বেচাকেনায় এ রকম উদার হওয়া সম্ভব নয়।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় থাকলে অবশ্যই সম্ভব। এ ব্যাপারে হাদিস শরিফে খুব সুন্দর একটি সত্য ঘটনা রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের পূর্বকালে এক ব্যক্তি এক খণ্ড জমি ক্রয় করে তার মধ্যে সোনাভর্তি একটি কলস পায়। সে (বিক্রেতাকে) বলল, আমি তো তোমার থেকে জমি ক্রয় করেছি, সোনা কিনিনি। বিক্রেতা বলল, আমি তোমার নিকট জমি এবং তার মধ্যকার সব কিছু বিক্রয় করেছি।
অতঃপর তারা বিষয়টির মীমাংসার জন্য এক ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হলো। লোকটি বলল, তোমাদের দুজনের কি সন্তান-সন্ততি আছে? একজন বলল, আমার একটি পুত্রসন্তান আছে। অপরজন বলল, আমার একটি কন্যাসন্তান আছে। লোকটি বলল, তাহলে তোমরা ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দাও এবং এই সোনা তাদেরকে দাও, যাতে তারা এটা নিজেদের প্রয়োজনে খরচ করতে পারে এবং দান-খয়রাতও করতে পারে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৫১১)।
উল্লিখিত হাদিসের ব্যক্তিদের মধ্যে আল্লাহর ভয় ও নৈতিকতা ছিল বলেই তাঁরা স্বর্ণের মতো দামি জিনিসের লোভ না করে পরস্পরের হক আদায়কে প্রাধান্য দিয়েছেন। নিজেদের লোভ সংবরণ করে, হারাম থেকে নিজেদের বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। এমনকি অন্যের হক তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা থেকে বিচারকের কাছে পর্যন্ত গিয়েছেন, অথচ এখন মানুষ মিথ্যা মামলা দিয়ে অন্যের হক গ্রাস করতে চায়।
বর্তমান যুগেও ক্রেতা-বিক্রেতা যদি একে অপরের হকের ব্যাপারে এ রকম আন্তরিক হতো, তাহলে পৃথিবীর চেহারাটা পরিবর্তন হয়ে যেত। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাকওয়া ও নৈতিকতা দান করুন। আমিন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ