ভারতে গুজরাটের আহমদাবাদে মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপর এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ আছড়ে পড়ার ঘটনায় নিখোঁজ মানুষ ও বিমানের যন্ত্রাংশের খোঁজে তল্লাশি অভিযান চলছে। বৃহস্পতিবারের ওই দুর্ঘটনায় লন্ডনগামী ফ্লাইটটির ২৪২ আরোহীর একজন বাদে বাকি সবাই নিহত হন। বিমানটি যে হোস্টেলের ওপর পড়ে সেখানকার ২৫ বাসিন্দাও হতাহত হয়েছেন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এখনো হোস্টেল এবং এর আশপাশের নিখোঁজদের সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে বিমানের যন্ত্রাংশ উদ্ধারে বৃহস্পতিবার রাতভর অভিযান চালানো হয়। ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, বিমানের দুটি ব্ল্যাকবক্সের একটি পাওয়া গেছে। ব্ল্যাকবক্স থেকে দুর্ঘটনার কারণ জানা যেতে পারে। যদিও বিশ্লেষকরা যান্ত্রিক ত্রুটি এবং পাখির আঘাতকে দুর্ঘটনার কারণ বলে মনে করছেন।
ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী রাম মোহন নাইড়ু কিনজারাপু জানিয়েছেন, এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। উড়োজাহাজ আছড়ে পড়ার সময় মেডিকেল হোস্টেলটিতে খুব বেশি মানুষ ছিল না বলে আশপাশের বাসিন্দারা জানিয়েছেন। গতকাল এয়ার ইনডিয়ার প্রধান নির্বাহী ক্যাম্পবেল উইলসনও দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন। এয়ার ইন্ডিয়া বলছে, দুর্ঘটনা নিয়ে তাদের তদন্ত শেষ হতে সময় লাগবে। উড়োজাহাজের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং জানিয়েছে, তদন্তে সহায়তা করতে তাদের একটি বিশেষজ্ঞ দল ভারতে যেতে প্রস্তুত।
ভারতে বিমান দুর্ঘটনার নেপথ্যে ৪ কারণ : ২৪২ জন আরোহী নিয়ে ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্তের যে ঘটনা, সেটিকে গত এক দশকের মধ্যে দেশটিতে সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা বলা হচ্ছে। ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে ফিরেছেন এক যুবক। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, ওই যুবকের নাম বিশ্বাস কুমার রমেশ। তিনি ছাড়া ২৪২ যাত্রীর ২৪১ জনই মারা গেছেন বলে দাবি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর।
কিন্তু ভয়াবহ এই বিমান দুর্ঘটনার কারণ কী, এ নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে এরই মধ্যে দুর্ঘটনাকবলিত বিমানের একাধিক ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। যেগুলো বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে তেমনই চারটি কারণ।
প্রথমত, এ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হতে পারে বিমানটির ভার এবং এ-সংক্রান্ত গণনায় ত্রুটি। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ওড়ার সময়ে যাত্রী, মালপত্রসহ বিমানের ওজন কত হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। প্রত্যেক বিমানের নির্দিষ্ট ভারবহন ক্ষমতা থাকে। কিন্তু অনেক সময় বিমান ওড়ার মুখে এই ওজনের হিসাবে গোলমাল করে ফেলেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তখন বিমানটি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। যে কোনো বিমানের আকার ও গঠন অনুযায়ী তার ভারবহন ক্ষমতা নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে।
বিমানের মধ্যে যাত্রীদের কোথায় বসানো হবে, কোন দিকে কত যাত্রী বসলে বিমানের সামনের ও পেছনের দিকের ভারসাম্য বজায় থাকবে, বিমান ওড়ার আগে তা হিসাব করতে হয়। এ ক্ষেত্রে হিসাবে ভুল হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
ভারতীয় বিমান বিশেষজ্ঞ বন্দনা সিংহ জানিয়েছেন, বিমানটি যে ভবনে ধাক্কা খেয়েছে, সেখানে তার একটি চাকা আটকে গিয়েছিল। ওজনের হিসাবে ভুল হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
দ্বিতীয়ত, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার। বিশেষজ্ঞেরা অনেকেই মনে করছেন, দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ারে ত্রুটি থাকতে পারে। হতে পারে ল্যান্ডিং গিয়ারটি বিমান ওড়ার পর ঠিকমতো বন্ধ হয়নি। এই ল্যান্ডিং গিয়ারই বিমানের ভার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিমান ওঠানামার সময় রানওয়ের সংস্পর্শে আসে ল্যান্ডিং গিয়ার। এখান থেকে বিমানের চাকা বেরিয়ে আসে। ফলে বিমানের গতিও ল্যান্ডিং গিয়ারের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়। সেখানে গোলমালের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
তৃতীয়ত, উড্ডয়নের পরই বিমানের ওপরের দিকে ওঠার ক্ষমতা (লিফ্ট) কমে এসেছিল। একসময় তা একেবারে শেষ হয়ে আসে। তখন বিমানটিকে আর ভাসিয়ে রাখতে পারেননি পাইলট। ভিডিও বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রানওয়ে ছাড়ার পর বিমানটি মাঝপথে সামান্য ধাক্কা খেয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। লিফ্ট কমে যাওয়ার কারণেই এমনটি ঘটতে পারে।
চতুর্থত, বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটির ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল। সেটি ভেঙে পড়ার আগে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩২২ কিলোমিটার গতিতে পৌঁছাতে পেরেছিল, যা একেবারেই স্বাভাবিক নয়। ওই সময়ে বিমানের গতি আরও অনেক বেশি হওয়ার কথা। কোনো কারণে বিমানের ইঞ্জিন শক্তি হারিয়ে ফেলে। এতে দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে ওঠে।