ব্রিটেনের ১৭০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী সংবাদপত্র ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’ অবশেষে নতুন মালিকানায় যাচ্ছে। মার্কিন বিনিয়োগ সংস্থা রেডবার্ড ক্যাপিটাল পার্টনার্স ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৬৭৫ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের চুক্তিতে টেলিগ্রাফ মিডিয়া গ্রুপের মালিকানা অর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের মালিকানা জটিলতার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
কেন আলোচনায় ‘রেডবার্ড–আইএমআই’
২০২৪ সালে রেডবার্ড ক্যাপিটাল, আবুধাবির রাজপরিবারের সদস্য শেখ মনসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ান-এর অর্থায়নে পরিচালিত ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ইনভেস্টমেন্টস (আইএমআই)-এর সঙ্গে যৌথভাবে ‘রেডবার্ড-আইএমআই’ নামে ডেইলি টেলিগ্রাফ কেনার চেষ্টা করেছিল। তবে ব্রিটিশ সরকার বিদেশি মালিকানায় সংবাদপত্র বিক্রি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তখন সেই চুক্তি ভেস্তে যায়।
বর্তমানে লেবার পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার আইন শিথিল করে বিদেশি রাষ্ট্রকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত মালিকানার অনুমতি দেওয়ায় রেডবার্ড নতুন করে এগোয়। তবে আইএমআই সীমিত শেয়ার মালিকানায় থাকছে।
ডেইলি টেলিগ্রাফের রাজনৈতিক পরিচিতি ও আগের ইতিহাস
জনপ্রিয়ভাবে ‘টোরিগ্রাফ’ নামে পরিচিত এই সংবাদপত্রটি ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির ঘনিষ্ঠ মিডিয়া হিসেবে বিবেচিত। ২০২৩ সালে ‘রেডবার্ড-আইএমআই’ বার্কলি পরিবারের ঋণ পরিশোধ করে ডেইলি টেলিগ্রাফ ও ‘দ্য স্পেকটেটর’ ম্যাগাজিন কিনে নেয়।
তবে বিদেশি মালিকানা নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে স্পেকটেটরকে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি করে দেওয়া হয় ব্রিটিশ হেজ ফান্ড বিনিয়োগকারী পল মার্শালের কাছে।
রেডবার্ড কী পরিকল্পনা করছে?
১১ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত রেডবার্ড ক্যাপিটাল ইতোমধ্যে স্কাইডান্স মিডিয়া, ফেনওয়ে স্পোর্টস গ্রুপ (বোস্টন রেড সক্স, লিভারপুল এফসি) ও নিউইয়র্ক ইয়াঙ্কিসের স্পোর্টস নেটওয়ার্কে বিনিয়োগ করেছে।
এক্স-এ (সাবেক টুইটার) রেডবার্ডের এক পোস্টে বলা হয়, এই অধিগ্রহণে টেলিগ্রাফের মালিকানা নিয়ে দুই বছরের অনিশ্চয়তার অবসান ঘটেছে।
রেডবার্ডের প্রতিষ্ঠাতা জেরি কার্ডিনালে বলেন, “মালিকানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে টেলিগ্রাফ নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। আমরা এর প্রযুক্তি, গ্রাহক সংখ্যা ও আন্তর্জাতিক উপস্থিতি বাড়াতে চাই, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে।”
সংসদে বিতর্ক ও আইন সংশোধনের পটভূমি
প্রথম চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার পর নিউইয়র্ক সানের মালিক ডোভিড এফুনসহ অনেক মিডিয়া উদ্যোক্তা টেলিগ্রাফ কেনার চেষ্টা করেছিলেন। ২০২৪ সালে তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী লুসি ফ্রেজার ‘মুক্ত সংবাদমাধ্যমের স্বার্থে’ চুক্তি স্থগিত করেছিলেন।
বর্তমানে সংস্কৃতিমন্ত্রী লিসা ন্যান্ডি ১৫% বিদেশি মালিকানার সীমা নির্ধারণ করেছেন, যা গণমাধ্যম খাতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সহায়ক বলে মনে করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক