জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে হামলার ঘটনায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়েছেন জাতিসংঘের পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসিফ ইফতিখার। পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি এবং সাম্প্রতিক দুই দফা ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ নিয়েও কড়া কথা শুনতে হয়েছে তাকে।
জাতিসংঘের সবচেয়ে প্রভাবশালী অঙ্গসংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের যে ১০টি অস্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র রয়েছে, পাকিস্তান তাদের মধ্যে অন্যতম। গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর এ ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। এতে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা শুরু হয়। হামলার পর সিন্ধু নদের পানি আটকে দেওয়া, ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য নিজেদের স্থল, পানি ও আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিল এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিতসহ একাধিক পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।
উত্তেজনা শুরু হওয়ার পর পাকিস্তানের বিভিন্ন মন্ত্রী ও কর্মকর্তা এই মর্মে হুমকি দিয়েছেন যে যদি সত্যিই যুদ্ধ বাঁধে, সেক্ষেত্রে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবে পাকিস্তান। এ হুমকি দেওয়ার পর পাকিস্তানে যেকোনও সময় সামরিক অভিযান চালাতে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সম্প্রতি অনুমতি দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সম্প্রতি এ ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ চায় পাকিস্তান। সেই অনুসারে সোমবার পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সেই বৈঠকে আসিফ ইফতিখারকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা।
সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই নিউজ জানিয়েছে, এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে পেহেলগাঁও হামলার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক এবং হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আসিফ ইফতিখারকে একের পর এক প্রশ্ন করেন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।
সেই সঙ্গে এই হামলাকে ভারতের ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ এবং ‘সাজানো’ বলে যে দাবি করে আসছে পাকিস্তান, তা প্রত্যাখ্যান করেছে নিরাপত্তা পরিষদ এবং এ ঘটনার তদন্তে ভারতকে সহায়তা করার নির্দেশ দিয়েছে।
তবে হামলায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যে অভিযোগ তুলেছে ভারত, নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন জাতিসংঘের পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত। ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে তিনি বলেছেন— সিন্ধু নদের পানিপ্রবাহ আটকে দেওয়ার মাধ্যমে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।
নিরাপত্তা পরিষদের সোমবারের বৈঠকে কী কী আলোচনা হয়েছে, সে সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান কিংবা ভারত কোনও বিবৃতি দেয়নি। তবে বৈঠক শেষে পরিষদের অন্যতম সদস্য এবং তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রদূত খালেদ মোহাম্মদ খাইরি সাংবাদিকদের বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বেশ অস্থির এবং আমাদের প্রত্যাশা, কূটনৈতিক পন্থা ও সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনার প্রশমন ঘটবে। ভারত ও পাকিস্তান— উভয়কেই এ ব্যাপরে আহ্বানও জানানো হয়েছে।” সূত্র: এনডিটিভি
বিডি প্রতিদিন/একেএ