বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ওয়ারেন বাফেট। চলতি বছরের শেষ দিকে তিনি এই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন।
‘ওরাকল অব ওমাহা’ নামে পরিচিত ৯৪ বছর বয়সী এই ধনাঢ্য বিনিয়োগকারী কোম্পানির বার্ষিক সভায় জানান, তিনি কোম্পানির দায়িত্ব ভাইস-চেয়ারম্যান গ্রেগ অ্যাবেলের কাছে হস্তান্তর করবেন।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এ বছরের শেষে গ্রেগের কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হওয়ার সময় এসে গেছে।’
ওয়ারেন বাফেট ধুঁকতে থাকা টেক্সটাইল কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়েকে টেনে তুলে এক বিশাল বিনিয়োগ সাম্রাজ্যে পরিণত করেছেন। কোম্পানিটির বর্তমান মূল্য ১.১৬ ট্রিলিয়ন ডলার (৮৭০ বিলিয়ন পাউন্ড)। অনেকের মতে, বাফেট বিশ্বের সবচেয়ে সফল বিনিয়োগকারী।
তার বক্তব্যের পর ৪০ হাজার দর্শক দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে অভিবাদন জানালে বাফেট মজা করে বলেন, সবার প্রতিক্রিয়ায় যে উৎসাহ দেখা গেল, তা দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। নেব্রাস্কার ওমাহায় গত শনিবার কোম্পানির সভায় বাফেট বলেন, তার সিদ্ধান্তের কথা শুধু তার দুই সন্তান, হাওয়ার্ড এবং সুসি বাফেট জানতেন।
মঞ্চে বাফেটের পাশে বসা গ্রেগ অ্যাবেল তার ঘোষণায় স্পষ্টতই বিস্মিত হন। বাফেট চার বছর আগে অ্যাবেলকে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, তবে তখন তিনি কখন অবসর নেবেন সে বিষয়ে কিছু বলেননি।
সভায় ওয়ারেন বাফেট আরও জানান, বার্কশায়ার হ্যাথাওয়েরে তার কোনো শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, এগুলো দান করে দেওয়া হবে। তার এই ঘোষণায় শ্রোতারা করতালিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুকসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা বাফেটের ব্যবসায়িক উত্তরাধিকারের প্রশংসা করে বিবৃতি দিয়েছেন।
এক্স-এ টিম কুক লেখেন, ‘ওয়ারেনের মতো কেউ কখনও ছিল না, এবং অসংখ্য মানুষের মতো আমিও তার প্রজ্ঞা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি।’
ওয়ারেনের সঙ্গে পরিচয় তার জীবনের অন্যতম বড় সৌভাগ্য বলে জানান টিম কুক। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, গ্রেগের হাতে বার্কশায়ার ভালোভাবেই পরিচালিত হবে।’
২০২৩ সালে ওয়ারেন বাফেট একটি চিঠি প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে তিনি স্বীকার করেন যে অবসর নেওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও তিনি এখন ‘এক্সট্রা ইনিংসে খেলছেন।’
বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে বর্তমানে ৬০টিরও বেশি কোম্পানির মালিক, যার মধ্যে রয়েছে বীমা প্রতিষ্ঠান গেইকো, ব্যাটারি নির্মাতা ডারাসেল এবং রেস্টুরেন্ট চেইন ডেইরি কুইন।
এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি অ্যাপল, কোকা-কোলা, ব্যাংক অব আমেরিকা এবং আমেরিকান এক্সপ্রেসসহ বহু প্রতিষ্ঠানের বড় অংশীদার। বিলিয়ন ডলার দান করা ওয়ারেন বাফেটকে গত মাসে ব্লুমবার্গ বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১৫৪ বিলিয়ন ডলার।
তিনি মাত্র ছয় বছর বয়সে প্রথম অর্থ উপার্জন করেন। ১১ বছর বয়সে প্রথম শেয়ার কেনেন এবং ১৩ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেন। বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও বাফেট গত ৬৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কার ওমাহায় একটি সাধারণ বাড়িতে বাস করছেন।
ওয়ারেন বাফেট তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্যারিফ বা শুল্ক নীতির বিরুদ্ধেও মন্তব্য করেন এবং বিনিয়োগকারীদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।’
তিনি সভায় বলেন, ‘আমাদের বিশ্বের বাকি অংশের সঙ্গে বাণিজ্য করার দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। আমাদের যা সেরা, সেটা আমরা করতে চাই এবং তাদের যা সেরা, সেটা তাদের করতে দেওয়া উচিত।’
বিডি প্রতিদিন/নাজিম