জয়পুরহাটের কালাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা দিনদিন ভেঙে পড়ছে। প্রায় ২ লাখ মানুষের ভরসাস্থল এ উপজেলা হাসপাতাল জনবল সংকট, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মে বিপর্যস্ত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে প্রতিদিন রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।
কাগজে-কলমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন মাত্র ছয়জন। প্রতিদিন গড়ে ২৫০-৩০০ রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। এত সংখ্যক রোগীর সেবা দিতে ডাক্তার ও স্টাফরা হিমশিম খাচ্ছেন। দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় জেলা সদর বা নিকটবর্তী বেসরকারি হাসপাতালে।
উপজেলার বোড়াই গ্রামের আনজুমান গত মঙ্গলবার তাঁর স্ত্রীকে ভর্তি করান কালাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তিনি বলেন, ‘ওই রাতে তীব্র লোডশেডিং ছিল। মোবাইলের আলোতে রোগীকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হয়েছে। সারারাত খুব কষ্ট হয়েছে। হাসপাতালও যেন রোগী হয়েছে।’
ধুনট গ্রামের আসমা বেগম বলেন, ‘এই হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসক না থাকায় তিনি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেক টাকা খরচ হয়েছে।’ বানদীঘি গ্রামের তাজরুল ইসলাম জানান, ‘তার শিশুর চিকিৎসার জন্য সব পরীক্ষা করাতে হয়েছে বাইরে থেকে। তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’ খায়রুল ইসলাম নামে একজন রোগী বলেন, ‘টাকা ছাড়া ওয়ার্ডবয়রাও রোগীর দিকে ফিরে তাকান না।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুব-উল আলম জানান, ‘মাত্র কয়েকজন চিকিৎসক আর সীমিত সরঞ্জাম নিয়ে প্রতিদিন শত শত রোগীর সেবা দেওয়া কার্যত অসম্ভব। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু জনবল ও প্রযুক্তির ঘাটতির কারণে মানসম্পন্ন চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও সমস্যা সমাধান হচ্ছে না।’
জানা যায়, সার্জারি, শিশু স্বাস্থ্য, চক্ষু, নাক-কান-গলা, কার্ডিওলজি, অর্থপেডিকস, গাইনি, ডেন্টালসহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য। প্রসূতি, শিশু, হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত মানুষ প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। বাধ্য হয়ে তারা শরণাপন্ন হচ্ছেন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। যার খরচ জোগানো অনেকেরই সাধ্যের বাইরে।
শুধু চিকিৎসকই নয়, অন্যান্য জনবলেরও সংকট তীব্র। ১৯৪ জন কর্মচারীর মধ্যে ৯৩টি পদ দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা। নার্সের অভাবে ভর্তি রোগীর সঠিক পরিচর্যা হয় না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটেশন ব্যবস্থা যাথেচ্ছাই। টয়লেটের দুর্গন্ধে ওয়ার্ডে রোগীর থাকা দায়।
আল্ট্রাসনোগ্রাম, এক্সরে, ইসিজি মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্ট না থাকায় এসব যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা পুরোপুরি বন্ধ। সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে না প্রায় ছয় বছর ধরে। জ্বালানি বরাদ্দ না থাকায় চলে না জেনারেটর। বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেই পুরো হাসপাতালে অন্ধকার নেমে আসে। অভিযোগ আছে, সরকারি ওষুধ স্টোর থেকে তোলা হলেও রোগীর হাতে পৌঁছায় না।