‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছে বিশেষজ্ঞ প্যানেল। খসড়া প্রস্তাবে আদেশের নাম ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান) আদেশ’ হতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে। ওই প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনায় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, গণভোটের বিষয় ও সনদের বিভিন্ন প্রস্তাবের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’ গুরুত্ব পেয়েছে। কমিশন সাংবিধানিক আদেশের ওপর গণভোট ও আগামী সংসদের দ্বৈত ভূমিকা প্রস্তাবের কথা ভাবছে। কমিশন সূত্র জানায়, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে গত সপ্তাহে কমিশনের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে আলোচনা হয়। এ সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাব দেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেলকে অনুরোধ জানানো হয়। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের দেওয়া খসড়া প্রস্তাব নিয়ে গতকাল কমিশনের বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। খসড়া প্রস্তাবে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির প্রশ্নে সাংবিধানিক আদেশ জারির কথা বলা হয়েছে। যার ভিত্তিতে গণভোটের প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়ায় কীভাবে, ওই আদেশ জারি হবে এবং আদেশের ওপর কীভাবে গণভোট হবে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে আজ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে দু-এক দিনের মধ্যে সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিতে চায় ঐকমত্য কমিশন।
এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। ওই গণভোটের জন্য প্রস্তাবিত আদেশ জারি বা সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের ভিতরে কী থাকবে বা হবে সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এনিয়ে আজ আবারও কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করবে। তার পর কমিশন চেষ্টা করবে বিষয়টি চূড়ান্ত করার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান) আদেশ’ নামে সাংবিধানিক আদেশ জারির প্রস্তাব করা হয়েছে। আদেশটি সংবিধান ও অন্যান্য আইনের পরিপূরক হবে। এ আদেশের ভিত্তি হবে চব্বিশের গণ অভ্যুত্থান। গণ অভ্যুত্থানের ক্ষমতা বলে বিশেষ পরিস্থিতিতে এ আদেশ জারি করা হবে। আদেশের পরিশিষ্টে থাকবে জুলাই জাতীয় সনদ। ওই আদেশের পর গণভোট হবে। তবে সংবিধানিক আদেশ কে জারি করবেন, তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। একইভাবে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি ও ভিন্নমত) থাকা প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন আদেশে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, গণভোটে ভোটারদের জন্য একটিই প্রশ্ন রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ‘আপনি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ সমর্থন করেন কি না?’- এমন প্রশ্ন রাখা যেতে পারে।
তবে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো নিয়ে একটি প্রশ্ন ও নোট অব ডিসেন্ট থাকা প্রস্তাবগুলো নিয়ে আরেকটি প্রশ্ন রাখার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গণভোটে জনগণের অনুমোদন পেলে, এই আদেশে উল্লিখিত বিধান অনুযায়ী, আগামী সংসদে সংস্কার কার্যকর করতে হবে। এ জন্য আগামী সংসদের দ্বৈত ভূমিকা রাখার প্রস্তাব করা হবে। জুলাই সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত সংসদ একই সঙ্গে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। তবে গণভোট কখন হবে, সে বিষয়ে দুই ধরনের প্রস্তাব থাকবে, জাতীয় নির্বাচনের আগে ও জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে সরকার।
এদিকে কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পুনরায় সভা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের কমিশন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সভায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক। এ ছাড়া ভার্চুয়ালি অংশ নেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূঁইয়া।