মিষ্টি লেবু। নাম যেমন খেতেও ঠিক তেমন। কাঁচা অবস্থায় সবুজ। পাকলে কমলা কিংবা হলুদ। দেখতে অনেকটা মাল্টার মতো। আকাড়ে একটু বড়। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, স্বাদেও তেমন মজাদার। রসালো এ ফলের গন্ধও অতুলনীয়। সম্ভাবনাময় এ মিষ্টি লেবুর চাষ ছড়িয়ে পড়ছে রাঙামাটিতে। ফলনও হচ্ছে বাম্পার। চাহিদা বেশি। পুষ্টিগুণে ভরপুর। তাই দামও একটু বেশি। মিষ্টি লেবু চাষে আগ্রহ বেড়েছে পাহাড়ের কৃষকদের। এরই মধ্যে রাঙামাটির হাট বাজারে সয়লাব হয়েছে এ লেবুর। স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে এ লেবু বাজারজাত করা হচ্ছে ঢাকাও চট্টগ্রামে।
রাঙামাটির স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শহরের বনরূপা বাজারের বিভিন্নস্থানে জমজমাট বেচা-বিক্রি হচ্ছে মিষ্টি লেবু। দাম বেশি হলেও এ লেবু ক্রয় করছেন সবাই। প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এ মিষ্টি লেবু। যেখানে সাধারণ বিনি লেবু কিংবা পাতি লেবু জোড়া থেকে ১০ টাকা। সেখানে এ লেবুর দাম কয়েকগুন বেশি। কারণ নামে লেবু হলেও খেতে মিষ্টি। তাই মাল্টার চেয়ে চাহিদা এখন মিষ্টি লেবুর।
স্থানীয় মিষ্টি লেবু বিক্রেতা তুরজয় চাকমা বলেন, রাঙামাটিতে অনেকে নিজ উদ্যোগে বাগান করেছে মিষ্টি লেবুর। সেখান থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছি। কারণ এ ফলের চাহিদা ভালো। দাম ভালো পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ মিষ্টি লেবুর উপর দীর্ঘ ৪ থেকে ৫ বছর গবেষণার করেন। পরে ২০১৩ সালে তার সফলতা অর্জন করেন। সে সময় এ মিষ্টি লেবুকে বারি-১ নামে নিবন্ধন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া উপযুক্ত থাকায় এবারি মিষ্টি লেবু চাষ করা সম্ভব হয়েছে। পাহাড়ের মাটি এ লেবু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। মাটি উর্বর হওয়ায় মিষ্টি লেবু ফলনও ভালো হয়। এ লেবুতে ঔষধিগুণও রয়েছে। লেবুর মধুর কিংবা আদার সাথে মিশিয়ে পান করলে ঠান্ডা ও সর্দি কাশি উপশম হয়। তাছাড়া যে কোন ক্ষত শুকায়।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ে সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে মিষ্টি লেবু। রাঙামাটির ১০টি উপজেলায় অনেক চাষি ব্যক্তি উদ্যোগে মিষ্টি লেবুর বাগান গড়ে তুলেছে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে। বিশেষ করে রাঙামাটি সদর, নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, লংগদু কাপ্তাই ও রাজস্থলীতে বেশকিছু বাগান রয়েছে এ মিষ্টি লেবুর।
তবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এখনো এ লেবুর চারা সংগ্রহ করা হয়নি। অর্থাৎ যারা এ লেবু চাষ করেছে তারা বিভিন্নভাবে এ চারা রাইখালী গবেষনা কেন্দ্র থেকে সরবারহ করেছে।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা কৃষদের ৪ হাজার বিনা লেবু-১ এর চারা বিতরণ করেছি। আমাদের কাছে মিষ্টি লেবুর কোন চারা নেই। তবে পাহাড়ি মাটি লেবু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। যারা মিশ্র বাগান করেন তারা এ লেবু বাগান করে সফল হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল