জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলেছেন। আমাদের তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের পূর্বে সরকারের অবশ্য পালনীয় কিছু কর্তব্যের জায়গা রয়েছে। নির্বাচনের আগেই সংস্কার ও বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান করতে হবে, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই ঘোষণাপত্র ও প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আখতার হোসেন বলেন, গণহত্যাকারীদের বিচার ও রাষ্ট্র কাঠামোর গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে এ সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে সংস্কারকে দৃশ্যমান করা ও সংস্কার বাস্তবায়ন করা এ সরকারের অবশ্য কর্তব্য। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগেই মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব বলেও উল্লেখ করেন আখতার হোসেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, জুলাই সনদের যেসব সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের সময় থেকেই বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। আর সেই সংস্কারকে ভিত্তি করেই পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়বস্তুতে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেখানে বাস্তবায়নের পথ কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। যখন এ ঘোষণাপত্রকে পরবর্তী সংস্কারকৃত সংবিধানের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন আমাদের নতুন সংবিধানের যে দাবি সেটিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়। আখতার বলেন, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এ ঘোষণাপত্রের ২৫ ও ২৭ নম্বর পয়েন্টে- নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানে তফসিলে এ ঘোষণাপত্রকে উল্লেখ করার কথা বলা হয়েছে। এনসিপি দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে একটি নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়ে আসছে। সে লক্ষ্যে গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান পুনর্লিখনের দাবি আমরা সরকারের কাছে করে এসেছি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর যে উত্থান ঘটেছে, তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে এবং সেখানে জুলাই ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে এনসিপি সদস্যসচিব বলেন, আমরা দীর্ঘ সময় ধরে সরকারের কাছে যে দাবিগুলো জানিয়ে এসেছিলাম, তার কিছু বিষয় এখানে অনুপস্থিত রয়ে গেছে। জুলাই ঘোষণাপত্রে ‘৪৭-এর আন্দোলন উল্লেখ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এ ঘোষণাপত্রে শহীদের সংখ্যার ব্যাপারে ‘প্রায় ১ হাজার’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
অথচ জাতিসংঘের প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ জনের কথা। গত এক বছরে সরকার শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর, কোটা সংস্কার, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আবরার হত্যাকাণ্ড ও মোদিবিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ অনুপস্থিত থাকার কারণে ঘোষণাপত্রটি পরিপূর্ণতা পায়নি।