অবৈধ পথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টায় প্রায়ই ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। বাড়ছে নিখোঁজের সংখ্যা। এরপরও থামছে না ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মরণযাত্রা। জাতিসংঘ ২০২৪ সালকে অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে ‘প্রাণঘাতী বছর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ বছর ইউরোপীয় দেশগুলোতে রেকর্ডসংখ্যক বাংলাদেশি আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন। বেশির ভাগ আবেদনই বাতিল করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে কেবল ২০২৪ সালেই প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৯ হাজার মানুষ। নিখোঁজ হয়েছেন অনেকে। তাদের খোঁজ মিলছে না। পরিবার জানে না, তাদের প্রিয়জন বেঁচে আছেন কি না। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আরফি চৌধুরী (২৫) উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপ পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি স্থানীয় দালালের সহায়তায় লিবিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। লক্ষ্য ছিল লিবিয়া হয়ে অবৈধভাবে ইতালি পৌঁছানো। ৪ ফেব্রুয়ারি দালালের লিবিয়ার বাসা থেকে পরিবারের সঙ্গে কলে কথা বলার সময় হঠাৎ আরফির চিৎকার শোনা যায়। এরপর থেকেই নিখোঁজ তিনি। নিখোঁজ আরফির বাবা ময়মুন চৌধুরী জানান, দালাল শামায়ুন গনিসহ চক্রের সদস্যদের এখন বাড়িতে পাওয়া যায় না। মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া একই জেলার আকলু মিয়া, শাহিন মিয়া, পাবেল আহমেদ, মাসুদ রানা ও সামসুদ মিয়াসহ অন্তত অর্ধশতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশী এ তালিকায় রয়েছেন। যাদের কেউ পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে নিখোঁজ। স্বজনরা জানেন না, তারা বেঁচে আছেন, নাকি হারিয়ে গেছেন ভূমধ্যসাগরে। নিখোঁজদের স্বজনরা বলছেন- তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে অজানা আতঙ্ক আর আশায়।
গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা রহমান সুমনা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা এই পথে পা বাড়ান, তারা প্রায়ই মানব পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়েন, অনেক সময় প্রাণ হারান কিংবা নিখোঁজ হন। তিনি বলেন, আমি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অনুরোধ করব, তারা যেন অবৈধ পথে পাড়ি দিয়ে নিজেদের জীবন হুমকির মুখে না ফেলেন। ২০২৪ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন ১ লাখ ৮ হাজার ১৩১ বাংলাদেশি। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার ৮৬৭ জন। এ ছাড়া ২০২৪ সালে জাতিসংঘের নথিভুক্ত বাংলাদেশি শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৪৭৩ জনে। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ১২৬ জন। ২০২৪ সালে আশ্রয় চাওয়া দেশগুলোর মধ্যে ইতালি শীর্ষে। ইউরোপের এই দেশে ৩২ হাজার ৮৬৩ জন বাংলাদেশি নতুন করে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন। এরপরই রয়েছে উত্তর আমেরিকার কানাডা, যেখানে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন ১৫ হাজার ৭৩৬ জন। তৃতীয় অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে ৩ হাজার ৪১৯ জন বাংলাদেশি আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন।
ইউরোপে আশ্রয় পাওয়ার হারে বাংলাদেশিরা বেশ পিছিয়ে। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি আবেদনকারীদের মাত্র চার শতাংশকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, যা সার্বিক আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে সর্বনিম্ন।