শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহতের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস ধর্মঘট পালন করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ এর ব্যানারে মধুর ক্যান্টিনের সামনে জড়ো হন তারা। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন অনুষদের সামনে যান এবং একে একে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, কলা অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, রেজিস্ট্রার ভবন, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ও সেন্ট্রাল লাইব্রেরির গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন।
গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তমঞ্চ এলাকায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ও স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) নিহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার অর্ধ দিবস ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত রেখে শোক দিবস ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দুপুর ২টা থেকে আবার ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রশাসনের এই অর্ধ দিবস ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টিকে প্রহসন আখ্যা দিয়ে এদিন পূর্ণ দিবস শোক পালন করতে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ এর ব্যানারে ঢাবি শাখা ছাত্রদল, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কয়েকজন নেতা-কর্মী ধর্মঘট পালন করেন। এ সময় তারা একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন থেকে জোর করে বের করে দেন শিক্ষার্থী-কর্মকর্তাদের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, কলা ভবনের ডিন অফিসে গিয়ে কর্মচারীদের ‘এই বের হ, এই বের হ’ বলতে থাকেন ধর্মঘট পালনকারীদের কয়েকজনকে। যদিও এরই মধ্যে এদিন দুপুরে পূর্ণ দিবস শোক ও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঢাবির রেজিস্ট্রার মুন্সী শামস উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুপুরের দিকে কয়েকজন এসে প্রশাসনিক ভবনের বিভিন্ন রুমে গিয়ে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বলে, দুই মিনিটের মধ্যে রুম থেকে বের হয়ে যেতে। ধর্মঘটের পাশাপাশি উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে কালো ব্যাজ ধারণ করে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ছাত্রদল। কর্মসূচিতে ছাত্রদলের কেন্দ্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, তিতুমীর কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ ও ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। এ সময় তারা ‘এক দুই তিন চার, ভিসি তুই গদি ছাড়’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান। গত বুধ এবং বৃহস্পতিবার ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশে ক্যাম্পাসে বহিরাগত ছাত্রদলের অংশগ্রহণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে। ছাত্রদলের বুধবারের সমাবেশে হেনস্তার শিকার একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদক জানান, ভিসি চত্বরে অবস্থানকালে তিনি যখন বন্ধুর সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তখন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. রফিকউল্লাহ এসে তাকে ‘থাপড়াবে’ এবং ‘এখান থেকে চলে যা’ বলে হুমকি দেন। পরে অন্য একজন সাংবাদিক হেনস্তাকারীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আবু সাইদ তার পথরোধ করে খারাপ আচরণ করেন। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও তিনি ধাক্কাধাক্কি ও গালিগালাজ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই মন্তব্য করেন, ছাত্রদল ক্যাম্পাসে বহিরাগত এনে সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করছে। এসব বহিরাগতের অনেককে শিক্ষার্থী বলেও মনে হয় না। ছাত্রলীগের মতো ক্যাম্পাসে বহিরাগত এনে রাজনীতি বন্ধ করা উচিত। সাম্য নিহতসহ বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে হওয়া ঘটনার জের ধরে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকালে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’। সমাবেশ থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যর্থতার দায় নিয়ে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ ও প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি জানান।