১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (২০২০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী চতুর্থ স্থানে অবস্থান সাবেক রাষ্ট্রপতির। সে হিসেবে তিনি একজন গানম্যান ও তিন থেকে পাঁচজন পুলিশ সদস্যের প্রটেকশন পেয়ে থাকেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি এ সুবিধা পেয়ে থাকেন। সে অনুযায়ী মো. আবদুল হামিদ বুধবার বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত হওয়ার কথা। রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার বাসা থেকে বেরিয়ে রাত ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। পরিবারের আরও দুই সদস্যসহ প্রায় চার ঘণ্টা অবস্থান করেন ইমিগ্রেশন বিভাগে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষেই রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৪০ নম্বর ফ্লাইটে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে পৌঁছার পর উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি অবগত করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তখন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় তাঁর নাম থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। নাম না থাকায় তাঁকে সসম্মানে দেশ ত্যাগ করতে অনুমতি দিতে বাধ্য হন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। এর বাইরে তিনি চতুর্থ স্টেজের ক্যানসার রোগী বলে অবগত করেছিলেন দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের বিষয়টি সবাই অবগত ছিলেন। ব্যবহার করেছেন ভিআইপি টার্মিনালও। সে সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন শ্যালক ডা. এ এম নওশাদ খান ও ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ। তবে গণহত্যায় নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় হওয়া মামলার আসামি তিনি। মো. আবদুল হামিদসহ ১২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তহমুল ইসলাম মাজহারুল নামে একজন। তবে বিভিন্ন বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং স্থলবন্দরে পাঠানো নিষেধাজ্ঞার তালিকায় মো. আবদুল হামিদের নাম ছিল না। এ কারণে দেশ ছাড়তে কেউ তাঁকে বাধাও দেয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক সূত্র।
সূত্র বলছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছার পর থেকে দেশত্যাগ পর্যন্ত সার্বিক বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তা পাঠানো হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে। রিপোর্টে বলা হয়, টিজি বিমানযোগে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যাংককগামী যাত্রী মো. আবদুল হামিদ ভিআইপি টার্মিনালে এলে টার্মিনাল ইনচার্জ ওসি ইমিগ্রেশনকে বিষয়টি জানান। তিনি আলাদা দুটি সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। তাঁরা দুজনই এ বিষয়ে অনাপত্তি দেন। এ অনাপত্তির বিষয়টি ইমিগ্রেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হয়। ওসি ইমিগ্রেশন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ, প্রাপ্ত অনাপত্তি এবং ইমিগ্রেশন ফরট্র্যাক সিস্টেমে কোনো বিরূপ মন্তব্য না থাকায় ভিআইপি টার্মিনালের ইনচার্জকে ইমিগ্রেশন করার নির্দেশ দেন। টার্মিনাল ইনচার্জ ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। এ প্রতিবেদনে কর্মকর্তাদের নাম, পদবি এবং টেলিফোন নম্বরও উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় অতিরিক্ত আইজিপিকে (প্রশাসন) প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না বলেছেন পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর। তবে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফকে প্রত্যাহার, কিশোরগঞ্জ সদর থানায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আজহারুল ইসলাম এবং এসবি কর্মকর্তা মো. সোলায়মানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রত্যাহার করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারকেও। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাজ শুধু অপারেশনাল দায়িত্ব পালন করা। বিমানবন্দর দিয়ে দেশত্যাগের সময় কেউ স্টপ লিস্টে আছেন কি না, তা এসবিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা যাচাই করে থাকে।’