ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলায় অনিরাপদ হয়ে পড়েছে আকাশপথ। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অনেক ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করেছে বিভিন্ন এয়ারলাইনস। বাংলাদেশগামী তিনটি ফ্লাইট ঢাকায় না এসে মাঝ আকাশ থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। পরে অন্য দেশ হয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে অবতরণ করেছে। পাকিস্তান রুটের টিকিট ফেরত দিচ্ছে এয়ার অ্যারাবিয়া। এর ফলে শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে বিভিন্ন বিমানবন্দরে। যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে।
ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক সংঘাতের কারণে ঢাকামুখী তিনটি ফ্লাইটকে পথ পরিবর্তন করতে হয়েছে। ফ্লাইটগুলো কুয়েত ও তুরস্ক থেকে আসছিল বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম। তিনি গতকাল বলেন, মিসাইল হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-পাকিস্তান আকাশপথ বর্তমানে অনিরাপদ বিবেচিত হওয়ায় বাংলাদেশগামী তিনটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট তাদের গন্তব্য পরিবর্তন করেছে। এর মধ্যে তুরস্ক থেকে রওনা হওয়া টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পাকিস্তানের আকাশপথ এড়িয়ে ওমানের মাসকট বিমানবন্দরে অবতরণ করে। কুয়েত থেকে রওনা হওয়া জাজিরা এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট ঘুরিয়ে দুবাইয়ে নেওয়া হয়। একই এয়ারলাইনসের আরেকটি ফ্লাইট কুয়েতে ফিরে যায়। তিনি বলেন, বুধবার সকালে স্বাভাবিকভাবেই ডাইভার্টেড ফ্লাইটগুলো ঢাকায় পৌঁছাতে শুরু করে। দুপুরের মধ্যে ফ্লাইটগুলো ঢাকায় পৌঁছে। বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে। এদিকে পাকিস্তান রুটের ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি স্থগিত করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠান এয়ার অ্যারাবিয়া। গতকাল সকালে বাংলাদেশের সব ট্রাভেল এজেন্সিকে বার্তার মাধ্যমে টিকিট বিক্রি না করার নির্দেশনা দিয়েছে তারা।
এয়ার অ্যারাবিয়া শারজাহ থেকে পাকিস্তানের করাচি, ইসলামাবাদ, লাহোর, মুলতান, ফয়সালাবাদ, পেশাওয়ার, কোয়েটা এবং শিয়ালকোটের ফ্লাইট পরিচালনা করত। বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের কোনো শহরে সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় অনেক বাংলাদেশি ঢাকা থেকে শারজাহ ট্রানজিট নিয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে যেতেন। এয়ারলাইনসের অভ্যন্তরীণ প্রটোকলের সঙ্গে সমন্বয় নিশ্চিত করতেই এমন সিদ্ধান্তের কথা ওই বার্তায় বলা হয়।
তাইওয়ানের ইভা এয়ার জানিয়েছে, নিরাপত্তার কারণে ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল এড়িয়ে চলার জন্য নতুন করে রুট নির্ধারণ করছে ইউরোপগামী ও ইউরোপফেরত ফ্লাইটগুলো। দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ার জানিয়েছে, তারা সিউল থেকে দুবাইগামী ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করেছে। তারা এখন পাকিস্তানের আকাশের পরিবর্তে মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও ভারতের ওপর দিয়ে চলবে। থাই এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়াগামী ফ্লাইটগুলো বুধবার ভোর থেকে নতুন রুটে যাচ্ছে। এতে কিছু ফ্লাইটের দেরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা।
ভিয়েতনাম এয়ারলাইনস জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে তাদের ফ্লাইট পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাইওয়ানের চায়না এয়ারলাইনস জানিয়েছে, চলমান প্রেক্ষাপটে যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা জরুরি পরিকল্পনা করছে। তবে তারা এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি। এ ছাড়া কাতার এয়ারওয়েজও পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার জন্য পাকিস্তানে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করেছে।
বিবিসি জানায়, ভারত ও পাকিস্তানে প্রায় ৫৫০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিমান হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানে একের পর এক পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। এতে শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে বিমান চলাচল।
রিয়েল-টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং পরিষেবা ফ্লাইট রাডার-২৪-এর তথ্যানুসারে, বিমান হামলার পর থেকে পাকিস্তানে নির্ধারিত সমস্ত বাণিজ্যিক ফ্লাইটের ১৬ এবং ভারতে ৩ শতাংশ বাতিল করা হয়েছে। ট্র্যাকার অনুসারে, পাকিস্তানে ১৩৫টি এবং ভারতে ৪১৭টি নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল করা হয়।