১৯৮৫ সালে ঢালিউডে সর্বাধিকসংখ্যক ছবি মুক্তি পায়, ৬৭টি। আগের বছর মুক্তি পায় ৫৪টি। যদিও পাকিস্তান আমলেই জহির রায়হানের হাত ধরে এ দেশে রঙিন ছবি তৈরি হয়। কিন্তু তারও দুই দশক পর বছরে মোট নির্মিত সিনেমার বড় একটি অংশ ছিল সাদাকালো। ১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার মধ্যে রঙিন ৩৪টি, আংশিক রঙিন ১০ ও সাদাকালো ২৬টি
ঢাকাই চলচ্চিত্র ব্যবসায় ধসের বছর হিসেবে গণ্য করা হয় ১৯৮৫ সালকে। তৎকালীন সিনেমা বিষয়ক পত্রিকা সাপ্তাহিক পূর্বাণীতে ওই বছরের মুক্তি পাওয়া ছবির ব্যবসায়িক হিসাবনিকাশ পর্যালোচনা করে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে আরও কারণ এ রিপোর্টে তুলে ধরা হয়। পূর্বাণীর রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে ঢালিউডে সর্বাধিকসংখ্যক ছবি মুক্তি পায়, ৬৭টি। আগের বছর মুক্তি পায় ৫৪টি। যদিও পাকিস্তান আমলেই জহির রায়হানের হাত ধরে এই দেশে রঙিন ছবি তৈরি হয়। কিন্তু তারও দুই দশক পর বছরে মোট নির্মিত সিনেমার বড় একটি অংশ ছিল সাদাকালো। ১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার মধ্যে রঙিন ৩৪টি, আংশিক রঙিন ১০ ও সাদাকালো ২৬টি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৫ সালে সর্বাধিক ছবি মুক্তি পেলেও ব্যবসার দিক থেকে ছিল কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। ছবির হার বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়িক নীতির কথা বলে পূর্বাণী। যার কারণে যেনতেন সিনেমা বানানো শুরু হয়। এতে করে পড়ে যায় ছবির মান।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বছর দুই আগে ক্যাপাসিটি ট্যাক্স পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে ছবির ব্যবসা বেড়ে যায়, ফলে ছবি নির্মাণের সংখ্যাও বেড়ে যায়। ক্যাপাসিটি ট্যাক্সের সুযোগে নির্মাতাদের মধ্যে কে কত তাড়াতাড়ি ছবি তৈরি করে সহজেই আশাতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করা যায় সেই প্রতিযোগিতায় নেমে যান। এতে ছবি নির্মাণে যত্নের অভাব দেখা দেয়। প্রত্যেকেই যেনতেন ধরনের ছবি নির্মাণ করতে শুরু করেন। পরিবর্তীতে ছবির সংখ্যা বাড়লেও ছবির গুণগতমান বৃদ্ধি পায়নি। তাই দর্শক একই ছবি বারবার দেখে দেশীয় ছবির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছেন। ‘অন্যদিকে ভিসিআরে বিদেশি ছবি দেখে দর্শকের চোখও খুলে গেছে’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, তাই যেনতেন প্রকারে নির্মিত ছবি দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। অন্যদিকে ছবির নির্মাণ ব্যয়ও অত্যধিক বেড়ে গেছে। আর প্রতি সপ্তাহেই নতুন ছবি মুক্তি পাওয়ায় দর্শকপ্রিয় গুটিকয় ছবি ছাড়া অন্য ছবিগুলোও আশানুরূপ ব্যবসা করার সুযোগ পায়নি। সব মিলিয়ে বলা যায়, ১৯৮৫ সাল চলচ্চিত্র ব্যবসার দিক থেকে মোটেই উল্লেখযোগ্য বছর নয়।
অবশ্য ‘উল্লেখযোগ্য নয়’ বলেও সুপারহিট-হিটের যে খতিয়ান পূর্বাণী উপস্থাপন করেছে তা আজকের দিনে চোখ কপালে ওঠার মতো। কারণ ব্যবসায়িক ধসের এই বছরেও তারা পাঁচটি ছবিকে সুপারহিট ও ১৩টিকে হিট বলে উল্লেখ করেছে। সুপারহিট ব্যবসা করা ছবির মধ্যে রয়েছে- অস্বীকার (শাবানা, সোহেল রানা, সুচরিতা, আলমগীর, ইমরান, পাপড়ি, দিলীপ বিশ্বাস), রঙিন রূপবান (রোজিনা, সাত্তার) (আজিজুর রহমান), চোর (সোহেল রানা, ববিতা, জাফর ইকবাল, রানী, রাজ্জাক) (গাজী মাজহারুল আনোয়ার), তিন কন্যা (সোহেল রানা, ববিতা, চম্পা, ইলিয়াস কাঞ্চন, সুচন্দা) (শিবলী সাদিক) ও সাহেব (ফারুক, রোজিনা) (নারায়ণ ঘোষ মিতা)। ১৯৮৫ সালে সর্বাধিক ছবির নায়ক ছিলেন ওয়াসিম (১৭), এরপর- আলমগীর (১০), রাজ্জাক (৮), ইলিয়াস কাঞ্চন (৮) ও সোহেল রানা (৮)। অন্যদিকে সর্বাধিক ছবির নায়িকা ছিলেন অঞ্জু ঘোষ (১৮), রোজিনা (১৭), ববিতা (১৩), সুচরিতা (৯) ও নূতন (৯)।