বাংলাদেশে মোবাইল খাতে উচ্চ স্পেকট্রাম ফি অতিরিক্ত কর বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন মন্তব্য করেছেন জিএসএমএ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান জুলিয়ান গোরম্যান।
তিনি বলেন, শুধু স্পেকট্রাম ফিই বাংলাদেশের অপারেটরদের মোট রাজস্বের প্রায় ১৬ শতাংশ শোষণ করে নেয়, যা বৈশ্বিক মানের দ্বিগুণ। মোবাইল অপারেটরের মোট রাজস্বের প্রায় ৫৫ শতাংশ বিভিন্ন কর ও লাইসেন্স ফিতে চলে যায়-এটি বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ হার।
গোরম্যানের মতে, এই পরিস্থিতি বিনিয়োগকে সীমিত করছে এবং প্রযুক্তি সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করছে। যদিও সরকারের রাজস্ব আহরণের প্রয়োজন আছে, তবুও বাজারভিত্তিক ও যুক্তিসঙ্গত শর্তে স্পেকট্রাম বরাদ্দ, স্থানীয় মুদ্রায় কিস্তিতে অর্থপ্রদানের সুযোগ এবং ভ্যাটসহ বাড়তি কর কমানো হলে খরচ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
জিএসএমএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেকট্রাম ফি ৫০ শতাংশ কমানো হলে ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব। আর ৭৫ শতাংশ কমালে এই সুফল ৪০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করতে পারে।
তিনি আরও জানান, শুধু দাম কমানোই সমাধান নয়। বাংলাদেশের জটিল নিয়ন্ত্রক কাঠামো ও কর ব্যবস্থা সংস্কার করা দরকার। বিশ্বব্যাপী ৮০টিরও বেশি অপারেটরের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্পেকট্রাম খরচ কমালে নেটওয়ার্ক কভারেজ ও গতি বাড়ে। তাই নীতিগত সংস্কারও পাশাপাশি দরকার।
গোরম্যান স্পষ্ট করে বলেন, বর্তমানে স্পেকট্রামের ওপর ভ্যাট ধার্য করা আসলে “ট্যাক্সের ওপর ট্যাক্স”। এটি ধাপে ধাপে বাদ দিলে খাতের চাপ কমবে। একইসঙ্গে সেক্টরভিত্তিক কর ধীরে ধীরে হ্রাস করলে ব্যবহারকারীর খরচ কমবে এবং বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হবে।
তিনি বলেন, স্পেকট্রাম খরচ কমানোর সুফল সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসার জীবনেও সরাসরি পড়বে। একজন কৃষক দ্রুত বাজার মূল্য জানতে পারবে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অনলাইনে পণ্য বিক্রি করতে পারবে, শিক্ষার্থী ই-লার্নিং সুবিধা নিতে পারবে। ৫জি ব্যবহার করে শিল্প, বন্দর ও বিমানবন্দর আরও কার্যকর হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি চীনের কিছু স্বয়ংক্রিয় ফ্যাক্টরির কথা উল্লেখ করেন, যেখানে রোবট ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশেও একই সম্ভাবনা রয়েছে।
শেষে গোরম্যান বলেন, মূল লক্ষ্য হলো শিল্পখাত ও সরকারের মধ্যে বিশ্বাস পুনর্গঠন করা। এজন্য স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তোলা দরকার। আজকের মতো রাউন্ডটেবিল আলোচনাই এ সহযোগিতার সূচনা। তার ভাষায়, ‘স্পেকট্রাম নীতি যেন বাধা নয়, বরং ডিজিটাল বৃদ্ধির উৎস হয়।’
বিডি প্রতিদিন/এমআই