বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্কে সংকট কাটিয়ে উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
রবিবার বিকেলে এফবিসিসিআইর মতিঝিল কার্যালয়ে ঢাকায় সফররত পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের এক আলোচনা সভা আয়েজন করা হয়। সভায় দুই দেশের বাণিজ্য, শিল্প, খাদ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান।
সভায় পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে দুই দেশই বর্তমানে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। পর্যটন, সংস্কৃতি, শিপ বিল্ডিং, কন্সট্রাকশন, আইসিটিসহ অনেক খাতে বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলো চিহ্নিত করতে পর্যায়ক্রমে পাকিস্তানের খাতভিত্তিক ডেলিগেশন বাংলাদেশে আসবে বলেও জানান তিনি।
চলমান সফরে বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানি জাহাজ তৈরি করে। পাকিস্তানেরও জাহাজ আমদানি করতে হয়। এখানে যৌথভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে নির্মান সামগ্রীও আমদানির সুযোগ দেখেছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী।
তবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পাশাপাশি ত্রিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের দিকেও মনযোগ দেওয়ার গুরুত্ব উল্লেখ করেন জাম কামাল খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তানে একসাথে কাজ করেলে আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার বিরাট বাজার ধরার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
এর আগে সভাপতির ব্ক্তব্যে এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর বলেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ধীরে ধীরে জোরদার হচ্ছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিতে পারস্পরিক সহযোগিতার আরও সম্ভাবনা রয়েছে। দুই দেশের পারস্পরিক উন্নয়ন ও সম্ভাবনা বাড়াতে নতুন সুযোগ অনুসন্ধানে একসাথে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রচারে যৌথ সহযোগিতা, দ্বি-পাক্ষিক এফটিএ-তে অগ্রিম গবেষণা, যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন, আইসিটি, কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, এমএসএমই, স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম, পর্যটন, ফিনটেক, উচ্চমূল্য শৃঙ্খল, টেক্সটাইল, পাট, ভোগ্যপণ্য, হালকা প্রকৌশল, অটোমোবাইল, সরবরাহ, পরিষেবা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং ডিজিটাল অর্থনীতিতে একসাথে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বাড়াতে উভয় দেশের উদ্যোক্তাদের নিয়ে সভা, সেমিনার আয়োজনে এফবিসিসিআই প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান হাফিজুর রহমান।
সভায় এফবিসিসিআইর মহাসচিব মো. আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাত তথা ব্যবসায়ীদের বিরাট অবদান রয়েছে। ছোট-বড় সব ধরনের অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়নে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যক্তি এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে সম্পর্ক জোরদারে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। দুই দেশের বাণিজ্য সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করে আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে ডেলিগেশন আদান প্রদান জরুরি। এজন্য দুই দেশের মধ্যে ভিসা সহজীকরণের আহ্বান জানান তিনি।
সভায় আরও কথা বলেন বাংলাদেশ সিএনজি মেশিনারিজ ইম্পোর্টারস্ এসোসিয়েশনের সভাপতি জাকির হোসেন নয়ন, এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক খন্দকার রুহুল আমিন, নিয়াজ আলী চিশতী, ঢাকা মোট্রপলিটন চেম্বারের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) চালু, পূর্বের মত বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের চা আমদানি ও পাটপণ্য আমদানির উপর জোর দেন বক্তারা।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী খোকন, আবুল হোসেন, আবু হোসেন ভুঁইয়া (রানু), এফবিসিসিআই ইন্টারন্যাশনাল উইং এর প্রধান জাফর ইকবাল এনডিসি, এফবিসিসিআই সেইফটি কাউন্সিলের উপদেষ্টা ব্রিগ. জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহীদউল্লাহ, ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এটাসি জেইন আজিজ প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত