অনেক অনেক দিন আগের কথা। তখন ছিল সত্য যুগ। পশু, পাখি, মানুষ সবাই সবার কথা বুঝতে পারত। সেদিন আকাশ ছিল মেঘলা। একটা নাচনেওয়ালী ময়ূর মেঘলা দিনে মনের সুখে নাচছে কোনো একটি বনের ভিতরের খোলা জায়গায়। আর বনের সব পশুপাখি স্টেডিয়ামের মতো চারদিকে ছড়িয়ে বসে সেই নাচ দেখছিল। কেউ কেউ হাততালি দিচ্ছিল, কেউ আবার গলা ফাটিয়ে আনন্দে চেঁচাচ্ছিল। অনেকক্ষণ পর নাচ থামল। সবাই এত সুন্দর নাচ দেখে ময়ূরকে অনেক অভিনন্দন জানাল। অবশেষে একটা সাপ গুটিগুটি পায়ে ময়ূরের সামনে এসে দাঁড়াল। ময়ূরটি সাপকে জিজ্ঞেস করল- তুমি কিছু বলবে ভাই? সাপ বলল, তুমি তো কত সুন্দর করে নাচো। তোমার নাচ পশু, পাখি, মানুষ সবাই পছন্দ করে, ভালোবাসে। আমাকে তোমার ওই সুন্দর নাচ শিখিয়ে দাও না ভাই, আমিও সবার ভালোবাসা পেতে চাই। আর আমাকে কিছু উপদেশও দিয়ে দাও, যাতে কারও সঙ্গে কোনো দিন আমার মারামারি বা ঝগড়া না হয়। ময়ুর তখন সাপকে কয়েক দিন চেষ্টা করে ভালো করে নাচ শিখিয়ে দিল আর উপদেশ দিল কাউকে আক্রমণ করবে না, তাহলেই সবাই তোমাকে ভালোবাসবে। ময়ূর সাপকে আরও বলল, আমি তো এই বনে নাচ দেখাই, তাই তুমি বরং পাশের বনে গিয়ে নাচ দেখিও। তাহলে দুজনারই সুবিধা হবে। সাপ তখন ময়ূরের কথামতো বুকে হেঁটে বহু পথ পাড়ি দিয়ে পাশের বনে চলে গেল। সেখানে সে পশুপাখিদের নাচ দেখাতে লাগল। কিন্তু পশুপাখিরা সাপকে দেখে ভয় পেয়ে গেল। কারণ তারা সাপ জাতিকে বিষধর বলেই জানে। তারা সবাই সেখান থেকে পালিয়ে গেল।
সাপ বারবার চেষ্টা করেও কাউকে তার নাচ দেখাতে পারল না। সে তখন মনের দুঃখে এক ভোরে বন থেকে বের হয়ে মানুষের তৈরি মেঠোপথে মনের দুঃখে পড়ে রইল। একটা মানুষ বেখেয়ালে সাপটাকে পাড়া দিয়ে চলে গেল। সাপটা রাগে মানুষটিকে ছোবল মারার জন্য ফণা তুলল। কিন্তু সেই মুহূর্র্তে তার ময়ূরের উপদেশ মনে পড়ল। সে মানুষটিকে আর আক্রমণ করল না। ধীরে ধীরে বেলা বাড়ল। রাস্তায় মানুষের চলাচলও বাড়ল। একে একে অনেক মানুষ সাপটাকে পাড়া দিয়ে চলে গেল। সাপটার অনেক কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু সে কাউকে কিছু বলল না। অবশেষে আধ মরা এই সাপটাকে কিছু মানুষ দেখতে পেয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলল। সাপটি সবার ভালোবাসা চেয়েও অবহেলা আর ঘৃণা ছাড়া কিছুই পেল না। অবশেষে তার কপালে জুটল মৃত্যু। তাই কথায় আছে চাইলেই ভালোবাসা সবার ভাগ্যে জোটে না।