বঙ্গোপসাগরের লোনাজলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তিন দিনের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব।
বুধবার (৫ নভেম্বর) ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে হাজারো নারী-পুরুষ ও শিশু ভক্ত আলোরকোল সমুদ্রসৈকতে নেমে পুণ্যস্নান করেন। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে শুরু হয়ে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী চলে এই স্নানোৎসব। স্নান শেষে পূজা-অর্চনা সম্পন্ন করে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হন ভক্তরা।
এ বছর রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩ হাজার ৫১৯ জন রাধা–কৃষ্ণের ভক্ত অংশ নেন। সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে দুবলার আলোরকোলে অস্থায়ীভাবে নির্মিত রাধা–কৃষ্ণ মন্দিরে পূজা–অর্চনা ও লীলা–কীর্তনে মেতে ওঠেন ভক্তরা। উৎসব চলাকালীন দুবলার চর ও আলোরকোল এলাকায় বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ।
উৎসব চলাকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বনবিভাগের পাশাপাশি কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের একাধিক দল দায়িত্ব পালন করে। কোস্টগার্ডের সদস্যরা উদ্ধারকারী জাহাজ ‘স্বাধীন বাংলা’ ও ডুবুরি দলসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা তদারকিতে ছিলেন। এছাড়া উৎসবস্থলে বাগেরহাট ও খুলনার জেলা প্রশাসন, বনবিভাগ ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার দুপুরে সুমন নামে এক পুণ্যার্থী সমুদ্রে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হন। পরে কোস্টগার্ডের উদ্ধারকারী জাহাজ ‘স্বাধীন বাংলা’ বিকেলে তাকে জীবিত উদ্ধার করে।
রাস উৎসব উদযাপন পরিষদ ও দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রায় ২০০ বছর ধরে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এই দুবলার চরে রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একসময় এখানে রাস মেলাও বসত, যেখানে লাখো ভক্ত ও দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটত। তবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে ২০১৭ সালের পর থেকে মেলার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সীমিত আকারে শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার পালনের অনুমতি দেওয়া হয়।
সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) রানা দেব বলেন, তিন দিনের রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩ হাজার ৫১৯ জন পুণ্যার্থী অংশ নিয়েছিলেন। উৎসবটি সফল ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য বনবিভাগের পাশাপাশি কোস্টগার্ড, পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/সুজন